ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলায় বাংলাদেশিসহ নিহত অর্ধশত
১ min readনিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৫ মার্চ) বন্দুকধারীর হামলা হয়। শহরের হাগলি পার্কমুখী সড়ক দীন এভিনিউতে আল নুর মসজিদ এবং লিনউডের আরেকটি মসজিদের কাছ থেকে গুলির শব্দ শোনা যায়। হামলার পর পুলিশের তরফ থেকে বেশ কয়েকজন হতাহত হওয়ার কথা জানালেও সংখ্যা নিশ্চিত করেনি তারা। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।
নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন জানান, হামলার ঘটনায় আল নুর মসজিদেই ৩০ জন নিহত ও লিনউডের মসজিদটিতে ১০ জন নিহত হয়েছে। এছাড়াও মারাত্মক আহত ২০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ক্যান্টারবুরি ডিস্ট্রিক্ট হেলথ বোর্ডের প্রধান নির্বাহী ডেভিড মিয়াটিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ক্রাইস্টচার্চের হাসপাতালগুলোতে গুলিবিদ্ধ ৪৮ জনের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্করা রয়েছেন। তাদের মধ্যে ছোটখাটো থেকে আঘাত থেকে শুরু করে গুরুতর আহতও রয়েছে। প্রায় দুইশো পরিবারের সদস্য তাদের স্বজনের খোঁজের অপেক্ষায় রয়েছেন।আরডার্ন বলেন, সহিংস হামলার জন্য নিউ জিল্যান্ডকে বেছে নেওয়া হয়েছে। কারণ, এটা বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, গ্রহণযোগ্যতার উদাহরণ। তিনি বলেন, আমরা বর্ণবাদকে ঘৃণা করি। ক্রাইস্টচার্চের হামলাকে সন্ত্রাসী হামলা অভিহিত করে আরডার্ন বলেন, ‘আমরা বৈচিত্র্য ও সহমর্মিতা ভাগাভাগি করে নিই। আমরা সেসব শরণার্থীর সঙ্গেই আমাদের ঘর ভাগ করে নিই, যারা আমাদের মূল্যবোধ ধারণ করেন। এই হামলার মধ্য দিয়ে ওই মূল্যবোধকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। দুইশ’রও বেশি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী ও ১৬০টির বেশি ভাষার অধিকারী আমরা এক গর্বিত জাতি।
পরে আরেক সংবাদ সম্মেলনে নিউ জিল্যান্ডের পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ জানান, দুই মসজিদে হামলায় অন্তত ৪৯ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে আল নুর মসজিদেই ৪১ জন নিহত হয়েছে বরে জানান বুশ।
তিন বাংলাদেশি নিহত ও আহত দুই
নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলার ঘটনায় তিন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি দূতাবাস থেকে পাঠানো এক প্রেসরিলিজে তিনজন নিহতের খবর জানানো হয়েছে। এদিকে অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত (নিউ জিল্যান্ডেরও দায়িত্বপ্রাপ্ত) বাংলাদেশি হাইকমিশনার মো. সুফিউর রহমান জানান, এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুই জন। হামলার ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন আরও তিন বাংলাদেশি।
নিরাপদে টাইগাররা
ক্রাইস্টচার্চে দুইটি মসজিদে বন্দুকধারীর হামলায় টাইগার সদস্যদের সবাই অক্ষত রয়েছেন। আজ (শুক্রবার) পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করতে গিয়ে এ ঘটনার সম্মুখীন হতে হলো তামিম ইকবাল, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলামদের।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি টেস্ট সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ খেলতে বাংলাদেশ দল এখন অবস্থান করছে ক্রাইস্টচার্চে। শনিবার বাংলাদেশ সময় ভোরে হাগলি ওভালে স্বাগতকদের বিপক্ষে খেলতে নামার কথা রয়েছে তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের।
তার আগে শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুরে ক্রাইস্টচার্চে টিম বাসে করে হাগলি পার্কের নিকটে একটি মসজিদে নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন তামিম, মিরাজ, তাইজুল, মুশফিকরা। এসময় তাদের সঙ্গ দিতে সাথেই ছিলেন সৌম্য সরকার, দলের স্ট্রেন্থ ও কন্ডিশনিং কোচ মারিও ভিল্লাভারায়ন, দলের ডাটা অ্যানালিস্ট শ্রিনিবাসসহ বেশ কয়েকজন সদস্য।
হুট করেই স্থানীয় সময় বেলার ১টা ৪০ মিনিটের দিকে বন্দুকধারী এক ব্যক্তি অতর্কিতভাবে ক্রাইস্টচার্চের সেন্ট্রাল মসজিদে ঢুকে এলোপাথারি গুলি শুরু করলে নিহত হন ছয়জন। তবে ঘটনার আকস্মিকতা টের পেয়ে বাস থেকে নেমে দ্রুতই হাগলি পার্ক দিয়ে মাঠে ফিরে যান তামিম-মিরাজরা। এসময় তারা স্থানীয় জনগণকেও সেন্ট্রাল মসজিদের আশেপাশে যেতে নিষেধ করেন।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সেখানে উপস্থিত থাকা বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটার তামিম ইকবাল নিজের টুইটার একাউন্টে লিখেন, ‘পুরো দল গোলাগুলির হাত থেকে বেঁচে গেলো। খুবই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা, সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’