মে ৩, ২০২৪ ৯:১৮ অপরাহ্ণ || ইউএসবাংলানিউজ২৪.কম

ইসরায়েলে রাস্তায় হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ

১ min read

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা প্রায় সাত মাস ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাকেও লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।

তবে এরপরও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হাতে আটক থাকা বেশিরভাগ বন্দিকেই উদ্ধার করতে পারেনি ইসরায়েল। এই পরিস্থিতিতে নতুন নির্বাচন আয়োজন ও বন্দিদের ফিরিয়ে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে আরও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে ইসরায়েলে রাস্তায় বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ।

রোববার (২১ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সর্বশেষ দফা বিক্ষোভে নতুন নির্বাচনের দাবিতে এবং গাজায় আটক বন্দিদের ঘরে ফিরিয়ে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে আরও পদক্ষেপের দাবিতে শনিবার রাস্তায় নেমেছেন হাজার হাজার ইসরায়েলি বিক্ষোভকারী।

গাজায় প্রায় সাত মাস ধরে ইসরায়েল আগ্রাসন চালাচ্ছে এবং হামাসের হাতে এখনও বন্দি থাকা ১৩৩ ইসরায়েলি বন্দির বিষয়ে নেতানিয়াহু সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের মধ্যে ইসরায়েলজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।

জরিপগুলোতে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, বেশিরভাগ ইসরায়েলি নাগরিক তাদের দেশে নিরাপত্তা ব্যর্থতার জন্য নেতানিয়াহুকে দায়ী করছেন। তবে ইসরায়েলের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী বারবার আগাম নির্বাচনের কথা অস্বীকার করেছেন। জনমত জরিপগুলো বলা হচ্ছে- এখন ইসরায়েলে নির্বাচন হলে তাতে নেতানিয়াহু হেরে যাবেন। আর তাই নেতানিয়াহুর দাবি, যুদ্ধের মাঝখানে নির্বাচনে যাওয়া কেবল হামাসকেই পুরস্কৃত করবে।

রয়টার্স বলছে, শনিবার তেল আবিবে বিক্ষোভ-সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন ইয়ালন পিকম্যান নামে ৫৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে এই সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে এসেছি, তারা আমাদেরকে মাসের পর মাস নিচে টেনে নিয়ে যাচ্ছে; ৭ অক্টোবরের আগেও এবং ৭ অক্টোবরের পরেও। আমরা নিচে নেমেই চলেছি।’

ইসরায়েলি মিডিয়া ২৪০ থেকে ২৫৩ ইসরায়েলি বন্দির গাজায় আটক থাকার কথা বলে থাকে। যার মধ্যে তিনজনকে ইসরায়েল মুক্ত করেছিল এবং ১০৫ জনকে হামাস গত বছরের নভেম্বরে বন্দি বিনিময় চুক্তির সময় মুক্তি দিয়েছিল। এছাড়া ইসরায়েলি হামলার কারণে আরও ৭০ জন বন্দির নিহত হওয়ার কথা বলে থাকে হামাস।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ কোনও ধরনের আশ্রয় ছাড়াই বসবাস করছে এবং প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম ত্রাণবাহী ট্রাক এই অঞ্চলে প্রবেশ করছে। ইসরায়েল গাজার ওপর ব্যাপকভাবে অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। এর ফলে এই ভূখণ্ডের জনগোষ্ঠী বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দারা অনাহারের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন।

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭৬ হাজারের বেশি মানুষ। এছাড়া ইসরায়েল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে। গত জানুয়ারিতে এই আদালতের দেওয়া এক অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে তেল আবিবকে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানের নিশ্চয়তা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এরপরও গাজায় ইসরায়েলি অভিযান চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সমস্ত বন্দিকে ইসরায়েলে ফিরিয়ে আনা এবং হামাসকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নেতানিয়াহু।

Comments

comments

More Stories

১ min read
১ min read

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!