যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
১ min read
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষিক্ত হলেন জো বাইডেন। ঘটনার ঘনঘটায় পূর্ণ ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের মেয়াদ শেষে হোয়াইট হাউজে গতকালই গৃহপ্রবেশ হলো জো বাইডেনের। ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় অনুযায়ী গতকাল দুপুর ১২টায় (বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী রাত ১১টা) প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন তিনি।
বাইডেন প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস। মার্কিন ক্যাপিটল হিল প্রাঙ্গণে গতকালের অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রথমে শপথ গ্রহণ করেন কমলা হ্যারিস। তাকে শপথবাক্য পাঠ করান মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সোনিয়া সোতোমায়ার। দুপুর ১২টার খানিকক্ষণ আগে শপথ নেন জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জন জি রবার্টস জুনিয়র তাকে ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ পড়ান।
চলমান মহামারী ও মার্কিন অর্থনীতির দুর্দিনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের কাজ যে খুব একটা সহজ হবে না তা বেশ ভালোভাবেই অনুধাবন করতে পারছেন জো বাইডেন। সে বিষয়টিরই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে অভিষেক অনুষ্ঠানে দেয়া তার বক্তব্যে। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, আমাদের এখন অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে এগোনো প্রয়োজন। কারণ এ বিপত্সংকুল শীতে সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আমাদের অনেক কিছু করতে হবে। অনেক কিছু ঠিক করতে হবে। অনেক কিছু পুনঃস্থাপন করতে হবে। অনেক ক্ষতকে সুস্থ করে তুলতে হবে। অনেক কিছু গড়তে হবে এবং অনেক কিছু আদায় করে নিতে হবে। আমাদের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত খুব কম মানুষকেই এরচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে বা এখনকার চেয়ে কঠিন সময় পার করতে হবে।
এ সময়ে ক্যাপিটল হিলে কয়েকদিন আগে ট্রাম্পের যুদ্ধংদেহী সমর্থকদের তাণ্ডবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, উচ্ছৃঙ্খল দাঙ্গাবাজরা ভেবেছিল তারা সহিংসতা দিয়ে জনগণের ইচ্ছাকে দমন করবে, আমাদের গণতন্ত্রের অর্জনকে থামিয়ে দেবে, এ পবিত্র ময়দান থেকে আমাদের উচ্ছেদ করবে, তার কয়েক দিন পর আমরা দাঁড়িয়ে আছি এখানেই। এর পুনরাবৃত্তি আর কখনো হবে না। আজ নয়। কাল নয়। কোনোদিন নয়।
ট্রাম্পের শাসনামলে মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে অবনতি হওয়া সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গিয়েছে এবং এতে উত্তীর্ণ হতে আমরা আরো শক্তিশালী হয়ে এসেছি। আমরা আমাদের মিত্রতার পুনরুদ্ধার ঘটাব এবং বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে আবারো সক্রিয় হয়ে উঠব।
তবে তা গতকালের বাধাগুলোকে মোকাবেলার জন্য নয়, বরং আজ ও আগামীকালের বাধাগুলোকে মোকাবেলার জন্য। আমরা স্রেফ আমাদের শক্তির উদাহরণ দিয়ে নয়, বরং আমাদের তৈরি করা উদাহরণের শক্তি দিয়েই নেতৃত্বের আসনে আসীন হবে। শান্তি, প্রগতি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমরা হয়ে উঠব শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত অংশীদার।
বাইডেন ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম কয়েকটি দিন ব্যয় হবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে সৃষ্ট সংকট নিরসনে। গতকাল ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই এ-সংক্রান্ত ১৭টি নির্বাহী আদেশে সই করার কথা তার। স্থানীয় সময় অনুযায়ী গতকাল বিকালে (বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী আজ ভোর) এসব আদেশে সই করার কথা জো বাইডেনের। নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি জানিয়েছেন, এসব নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ট্রাম্প শাসনামলের বিতর্কিত কয়েকটি সিদ্ধান্ত রদ বা পাল্টে দেবেন জো বাইডেন।
এর মধ্যে প্রথম নির্বাহী আদেশটি হতে পারে মার্কিন ফেডারেল সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে মাস্কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা সংক্রান্ত। এছাড়া ভ্যাকসিন ও চিকিৎসাসামগ্রী বণ্টনসংক্রান্ত একটি আদেশেও সই করার কথা রয়েছে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের।
এছাড়া ট্রাম্প যেসব আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে এনেছেন বা আনতে চেয়েছেন, প্রথম দিনেই সেগুলো আটকে দিতে কয়েকটি নির্বাহী আদেশ জারি করার কথা জো বাইডেনের। এক্ষেত্রে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তন ছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে প্রস্থান আটকানোর বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাওয়ার কথা। এর মধ্যে ডব্লিউএইচও থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্থান থামাতে আলোচনার জন্য মার্কিন প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেতে পারেন ডা. অ্যান্টোনিও ফাউসি।
ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী কঠোর কয়েকটি নির্বাহী আদেশও গতকাল রদ করার কথা জো বাইডেনের। এক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত কয়েকটি মুসলিম দেশ থেকে অভিবাসনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ছাড়াও মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে তহবিল জোগান বন্ধের আদেশগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এদিকে অভিষেকের আগে গতকাল সকালে জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস ওয়াশিংটনের শহরতলির একটি ক্যাথলিক গির্জায় প্রার্থনায় অংশ নেন। নতুন প্রশাসনের অধীনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রতীকী উপস্থাপনা হিসেবে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান পার্টির কংগ্রেস সদস্যরাও এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হচ্ছেন নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট সিনেটর চাক শুমার, কেন্টাকির রিপাবলিকান সিনেটর মিচ ম্যাককোনেল, স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি এবং হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে রিপাবলিকানদের নেতা ক্যাভিন ম্যাকার্থি।
এ সময় জো বাইডেনের সঙ্গে নতুন মার্কিন ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে তার স্বামী সেকেন্ড জেন্টলম্যান ডোগ এমহফ উপস্থিত ছিলেন।
বাইডেন-হ্যারিসের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না সদ্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রীতি অনুযায়ী অভিষেক অনুষ্ঠানে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তাতে অস্বীকৃতি জানান ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে সর্বশেষ দেড়শ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম কোনো বিদায়ী প্রেসিডেন্টকে ছাড়াই তার উত্তরসূরির অভিষেক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হলো।
এর আগে স্থানীয় সময় অনুযায়ী গতকাল সকালেই হোয়াইট হাউজ ত্যাগ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অনেকটা নীরবেই হোয়াইট হাউজ থেকে বিদায় নিয়েছেন তিনি। ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প একটি হেলিকপ্টারে চড়ে হোয়াইট হাউজ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন। এরপর হেলিকপ্টারটি মেরিল্যান্ডের জয়েন্ট বেজ অ্যান্ড্রুজে তাদের নিয়ে যায়।
সেখানে ট্রাম্পের জন্য সংক্ষিপ্ত ও অনাড়ম্বর একটি বিদায়ী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় ২১ বার তোপধ্বনি করে বিদায়ী প্রেসিডেন্টকে সম্মান জানায় সেখানে উপস্থিত মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্টের উড়োজাহাজ ফ্লাইট ‘এয়ারফোর্স ওয়ানে’ শেষবারের মতো আরোহণ করেন ট্রাম্প ও মেলানিয়া। উড়োজাহাজটি ওই সময় তাদের ফ্লোরিডায় নিয়ে যায়। হোয়াইট হাউজ ত্যাগ করার পর ট্রাম্প দম্পতির সেখানেই বসবাসের কথা রয়েছে।
হোয়াইট হাউজ ত্যাগের সময় রীতি অনুযায়ী পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য একটি প্রেসিডেন্সিয়াল নোট রেখে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও বাইডেনের অভিষেকে রীতিমাফিক উপস্থিত ছিলেন না তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে বিভিন্ন অভিযোগে সাজা ভোগকারী ৭০ জনের জন্য প্রেসিডেন্সিয়াল মার্জনা ঘোষণা করে যান । এ ৭০ জনের তালিকায় তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিভ ব্যাননও রয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি সাজা লঘু করেছেন আরো ৭৩ জনের। তবে নিজের বা নিজ পরিবারের সদস্যদের জন্য কোনো প্রেসিডেন্সিয়াল মার্জনা ঘোষণা করেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প।