জুন ২, ২০২৩ ৭:১৬ অপরাহ্ণ || ইউএসবাংলানিউজ২৪.কম

ইউএস বাংলানিউজ, নিউইয়র্ক

অগ্রসর পাঠকের বাংলা অনলাইন

বাফা’র ১০বছর পূর্তিতে আমাদের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা : বেনজির শিকদার

আমরা যারা অভিবাসী, দেশ হতে হাজার-হাজার মাইল দূরে অবস্থান করলেও মন পড়ে থাকে ধানের দেশ, গানের দেশ, প্রাণের দেশ, সবুজে শ্যামলে ঘেরা জন্মভূমি প্রিয় বাংলাদেশে। যেখানে প্রকৃতির আলোবাতাস হৃদয়ের গহীনে অবলীলায় তৈরি করে সুখের স্পন্দন। যার নৈসর্গিক সৌন্দর্য টেনে নিয়ে যায় অনুভবের এক স্মৃতিজাগানিয়া অচিনপুরে!
যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর থেকেই চলছিলো সবকিছুর সাথে মানিয়ে নেয়ার অন্যএক যুদ্ধ। বিশেষ করে আধুনিক বিশ্বের অচেনা পরিবেশে বিভিন্ন কারিক্যুলামের সাথে মানিয়ে নেয়া কী সহজ কাজ! বেঁচে থাকার পদচিহ্ন আঁকতে আঁকতে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলাম রোজ; ঠিক তখনই শৈল্পিকতা, সৃজনশীলতা, সততা আর ভালোবাসাময় একটা জায়গা খুঁজে পেলাম। নাম তার ‘বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস’ (বাফা)।
একদিন আমার ছোট্ট মেয়েটার হাতধরে হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে পৌঁছে গেলাম সেখানে। দেখা হলো বাফা’র প্রধান ফরিদা ইয়াসমিনের সাথে। পরিশীলিত ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের সাথে সত্যিই রসবোধের কোনো সংঘাত নেই। তার সাথে স্বল্পক্ষণের আলাপচারিতায় স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, তুমি বাঁচো; বাঁচার আনন্দে বাঁচো! বেঁচে থাকাটাই সত্য, বাকি সব মিথ্যা। মনে হতে লাগলো আর সময় নষ্ট নয়। ভর্তি করিয়ে দিলাম মেয়েকে। শুরু হলো বাফা এবং বাফা পরিবারের সাথে পথচলা।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, “যে ব্যক্তি নিজের ঘরকে অস্বীকার করে, কখনোই বিশ্ব তার ঘরে আতিথ্য গ্রহণ করতে আসে না।”
কাজেই দেশ ছেড়ে বহুদূরে চলে আসলেও বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি শুভবোধ, সৌন্দর্যবোধ বাঁচিয়ে রাখতে, প্রত্যেকেরই উচিত ভিন্ন সংস্কৃতিতে বেড়েওঠা আমাদের সন্তানদের মাঝে, এদেশের সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির বীজ বপনের জন্যও চেষ্টা করা। তাহলেই বোধকরি দিনশেষে শেকড় উপড়ানো কিংবা আইডেন্টিটি ক্রাইসিসের কষ্টটা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বহুজাতিক পরিবেশে জন্ম নেয়া ও বেড়েওঠা নতুন প্রজন্মের কাছে নিজস্ব সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে বৈষয়িক বিষয় ছাড়া নিষ্ঠার সাথে সে কাজটি করে যাচ্ছে ‘বাফা’। এছাড়াও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর কাছেও ‘বাফা’ বাংলা সংষ্কৃতিকে তুলে ধরছে।
লক্ষ্য করলে দেখা যায়— বিভিন্নদেশের সংস্কৃতিবিষয়ক অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের সহযোগী সংগঠন এখানে রয়েছে; যা তাদের কৃষ্টি-কালচারের প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে ওয়াশিংটন ডি. সি. তে অবস্থিত আই আই সি (The Italian cultural institute) -এর কথা। যা ইটালিয়ান সরকারের মিনিস্ট্রি অব ফরেন এফেয়ার্স এন্ড ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশনের একটি অফিস। কাজ করছে এদেশে ইটালিয়ান সংস্কৃতিকে প্রমোট করতে।
এক্ষেত্রে আমরা প্রস্তাব রাখতেই পারি, যদি বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কোনো সহযোগী প্রতিষ্ঠান এখানে স্থাপিত হয় তাহলে নতুনপ্রজন্মের কাছে বাংলাসংস্কৃতির বীজ বপন করার কাজটি এগিয়ে নিতে আমাদের জন্য অনেক সহজতর হবে। বলতে গেলে বাফা, ব্যক্তি উদ্যেগে এ কাজটি করে যাবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
শেকড়ের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে কিংবা শেকড়কে গ্রথিত করতে আমরা আমাদের সন্তানদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে পারি। প্রজন্ম বয়ে নিয়ে যাবে আমাদের সংস্কৃতি, সে প্রত্যাশায়— বাঙালি জাতিসত্ত্বার ভিত্তি বিনির্মানে সকলে মিলে এগিয়ে আসতে পারি, বাফা’র সাথে একাত্ম হয়ে বাড়িয়ে দিতে পারি সহযোগিতার হাত। হতে পারে তা অর্থনৈতিকভাবে কিংবা মানসিকভাবে।
দেশীয় সংস্কৃতি ও বাঙালি চেতনাকে তুলে ধরতে উত্তর আমেরিকায় ‘বাফা’ আমাদের অহংকার! বাংলা সংস্কৃতির চর্চা বয়ে চলুক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আর তাকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করতে শুভস্বপ্নের জয়যাত্রায় বাফা এগিয়ে চলুক এভাবেই।
দশ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাফা’কে অভিনন্দন! এই যাত্রা আরও সুদূরপ্রসারী হোক!
– লেখক : বেনজির শিকদার
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।

আরও পড়ুন

error: Content is protected !!