এপ্রিল ১৬, ২০২৪ ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ || ইউএসবাংলানিউজ২৪.কম

পর্তুগালের মোহনীয় শহর কুইমব্রা

১ min read

কুইমব্রা একটি পর্তুগিজ শহর, যা একসময় পর্তুগালের রাজধানী ছিল। কুইমব্রা শহরটি ম্যান্ডেগো নদীর তীরে অবস্থিত। প্রাচীন এই শহরটিতে রয়েছে ঐতিহাসিক অনেক স্থাপত্য। যার কারণে এই শহরটি ভ্রমন পিয়াসুদের কেন্দ্র বিন্দু হয়ে আছে। এই শহরে রয়েছে পর্তুগালের সবচেয়ে বড় ও প্রচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়, সাধারণ স্থাপত্য, স্মৃতিসৌধ এবং রোমান ধ্বংসাবশেষ সহ একাধিক ঐতিহাসিক বিল্ডিং।

সুন্দর এই শহরটি ঘুরে আসলাম আমি ও আমার ছোট ভাই মাহাবুব আলম। আমরা দুইজন একরাত ২দিনের সফরে বের হলাম। ঘড়ির কাঁটা ঠিক রাত সাতটা। সব কিছু প্রস্তুত করে আমরা বাহির হলাম লিসবনের শান্তা এ্যাপোলোনিয়া ট্রেন ষ্টেশনের দিকে। আমাদের ট্রেন ছেড়ে যাবে ৭:৩৩ মিনিটে। লিসবনের শান্তা এ্যাপোলোনিয়া টু কুইমব্রার টিকেট একদিন আগেই সংগ্রহ করেছি। আর কোথায় থাকবো সেটা আগেই ঠিক করে নিয়েছি ঝামেলা এড়ানোর জন্য। পর্তুগালের দুটি প্রধান শহর লিসবন ও র্পোতোর মাঝেই কুইমব্রার অবস্থান। লিসবন থেকে ২০৪ কিলোমিটার এবং পোর্তো থেকে ১২২ কিলোমিটারের পথ।

আমরা ঠিক ৭:২০ মিনিটে লিসবনের শান্তা এ্যাপোলোনিয়া ট্রেন ষ্টেশনে পৌছেছি । খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ট্রেন বাহির করে সিটে বসলাম। সঠিক সময়ে ট্রেনটি কুইমব্রার উদ্দেশ্য রওনা হলো। রাতের জন্য বাহিরের কোন দৃশ্য তেমন চোখে পড়েনি তবে দুএকটি ষ্টেশনে যখন ট্রেন যাত্রীর জন্য দাঁড়িয়েছে তখন বাহির দৃশ্যটি কিছু সময়ের জন্য চোখে পরেছে। উচুনীচু পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে বাতিগুলির দৃশ্য দেখে মনে হয় আকাশের তারকাগুলি দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে প্রতিটি শহরকে। চোখের হালকা ঘুমের মধ্যেই পৌছে গেলাম কুইমব্রা-বি ষ্টেশনে। সেখানে থেকে উবার দিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যেই পৌছে গেলাম হোটেলে। তারপর খাওয়া ও রাতের ঘুম। কিছু সময়ের জন্য জানালার ফাঁকে শহরটাকে দেখে নিলাম। ছবির মত সুন্দর ও মোহনীয় কুইমব্রা শহরটির চারদিকের মনোরম দৃশ্য।

শীতের সকাল, হালকা হিমেল বাতাসে কুয়াশা ভেসে বেড়াচ্ছে জানালার ফাঁক দিয়ে বাহিরের দৃশ্যগুলি চোখে পরছে। সকাল নয়টা ঘুম থেকে উঠে বাহির হলাম। সকালের নাস্তায় পর্তুগালের জনপ্রিয় খাবার নাতা ও কফির মাধ্যদিয়ে শেষ করেছি। ভ্রমনের স্থানগুলি আগে থেকেই নির্ধারন করা ছিল। তাই বেশী কষ্ট করতে হয়নি। গুগুল ম্যাপ দেখে প্রথমে রওনা হলাম মোনদেগো গ্রিন পার্কের উদ্দেশ্য। হোটেল থেকে ৭মিনিটের পথ, তাই পায়ে হেটে রওনা হলাম। ম্যান্ডেগো নদীর পার দিয়ে হাটছি আর চারদিকের সৌন্দর্য্য দেখছি। চারদিকে সারি সারি পাহাড়ের দৃশ্যগুলি স্বপ্নের মত লাগছে। পাহাড়ের ভাঁজে বাড়িগুলিকে খুব সুন্দর লাগছে। দেখতে দেখতে কিছু সময়ের মধ্যে পৌছে গেলাম মোনদেগো গ্রিন পার্কে। ম্যান্ডেগো গ্রিন পার্কেটি ভার্দে ডো ম্যান্ডেগো নদীর কিনারায় । সবুজ অঞ্চলটি প্রায় ৪কিলোমিটার দীর্ঘ। তার মাঝে রয়েছে সুবিশাল হাঁটার লাল ইটের পাকা রাস্তা। রাস্তায় অনেকে দৌড়াচ্ছে এবং সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে। আবার কেহ লেকের পারে বেয়াম করছে এবং অনেকে বরশি দিয়ে মাছে ধরছে। পাশে রয়েছে শিশুদের জন্য খেলাধুলার মাঠ। খেলাধুলার পাশাপাশি শিশুদের জন্য বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের ব্যবস্থা রয়েছে।

তারপাশেই রয়েছে সুন্দর মনোরম প্যাসেস্ট্রিয়ান ব্রিজ। আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে ব্রিজের দিকে রওনা হলাম। পেড্রো এবং ইন প্যাসেস্ট্রিয়ান ব্রিজ কুইমব্রা শহরের ম্যান্ডেগো নদীর উপর নির্মিত এই আকর্ষণীয় ব্রিজটি ২০০৬সালে উদ্বোধন করা হয়। ব্রিজটি ২৭৪.৫০ মিটার দীর্ঘ। ব্রিজটি তৈরি করা হয়েছে শুধু পথচারী আর সাইকেল পারাপারের জন্য। ব্রিজের মাঝখানে দাড়ালে কুইমব্রা শহরের আসল সৌন্দর্য্য ফুটে উঠে। একপাশে বহমান নদী, অন্যপাশে পাহাড় দূর থেকে শহরটিকে মোহনীয় ও আকর্ষণীয় লাগছে। এত সুন্দর দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করতে দুজন ব্যস্ত হয়ে গেলাম।

তারপর রওনা হলাম ঐতিহাসিক ও প্রচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় দেখার জন্য। শহরের মাঝে সবচেয়ে বড় পাহারের চুড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টি অবস্থান। উবার দিয়ে চলছি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দিকে। দশ মিনিটের মধ্যে পৌছে গেলাম প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কিছুটা সময় কাটিয়ে চলে গেলাম নিউ ক্যাথেড্রালের ফ্যাদে চার্চটি দেখার জন্য। নিউ ক্যাথেড্রালের সম্মুখভাগটিতে সুন্দর স্থাপত্য শৈলী রয়েছে। চার্চটির ভিতরের দেয়ালটি সুন্দর কারুকাজ ও নকশা দিয়ে সাজানো রয়েছে। নিউ ক্যাথেড্রাল চার্চটি ১৫৯৮ সালে নির্মিত হয়। কইমব্রা কখন যাবেন: কইমব্রা শহরটি সারা বছর ঘুরে দেখা যায়। শহরটি ছোট বিদায় পায়ে হেটে দেখাই ভালো। ঘুরে বেড়ানোর জন্য বসন্ত এবং গ্রীষ্মকাল সেরা সময়। তখন তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে থাকে। আর শীতকালে কইমব্রা পরিদর্শন করতে পারেন, তবে বৃষ্টি হলে ভ্রমণকে কষ্টদায়ক করে ফেলবে।

-মো: এনামুল হক, পর্তুগাল থেকে।

Comments

comments

More Stories

১ min read
১ min read
১ min read

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!