এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ৮:০০ অপরাহ্ণ || ইউএসবাংলানিউজ২৪.কম

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

১ min read

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে । পাশাপাশি নির্বাচনের তারিখ এক মাস পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে জোটটি।

১১ নভেম্বর, রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঐক্যফ্রন্টের এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও সাত দফা দাবি থেকে সরে আসেননি তারা; বরং এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নির্বাচনের তফসিল এক মাস পেছানোর দাবি।

ড. কামাল বলেন, একটি অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশন এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সমতল ক্ষেত্র) তৈরি করেনি। 

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘গণতন্ত্রের সংকট সমাধানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সবসময় আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতাকে গুরুত্ব দিয়েছে। সেই লক্ষ্যে ঐক্যফ্রন্ট সংলাপের জন্য সরকারকে আহ্বান জানায়। সেই আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি দলের আমন্ত্রণে ১ ও ৭ নভেম্বর গণভবনে সংলাপ হয়েছে।’

‘দুঃখজনকভাবে এই সংলাপে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বর্তমানের গভীর সংকট উত্তরণের পথে ন্যূনতম সমঝোতা করার মানসিকতা আমরা দেখতে পাইনি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা সরকারের কাছে যে ৭ দফা দাবি পেশ করেছিলাম, প্রায় সবগুলো দাবিই সরকার নাকচ করে দিয়েছে। এমনকি বর্তমান সংবিধান সংশোধন না করেও যে দাবিগুলো পূরণ করা যায়, তার প্রায় সবগুলোর ব্যাপারে তারা কোন আশ্বাস তো দেনইনি. উপরন্তু সেগুলোর কয়েকটি সংবিধান-বহির্ভূত বলেও বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে।’

সংলাপে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের বিষয়ে ফখরুল বলেন, ‘সংলাপে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন সভা-সমাবেশ করার ওপরে কোন নিষেধাজ্ঞা থাকবেনা এবং ‘‘গায়েবি মামলা’’সহ নানা রকম রাজনৈতিক মামলায় যারা গ্রেফতার হয়েছেন, তাদের মুক্তি দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে এই ধরনের হয়রানিমূলক মামলা আর দেওয়া হবে না। এরপর ঢাকা ও রাজশাহীতে আমাদের ‍দুটি জনসভা হয়েছে। দুটো জনসভাতেই লিখিত অনুমতি দিতে দেরি করে এবং সরকারি মদদপুষ্ট পরিবহন সংকট সৃষ্টি করে জনসভায় মানুষের অংশগ্রহণের পথ অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি রাজশাহী সঙ্গে আশপাশের অনেক জেলার বাস যোগাযোগ বন্ধ ছিল।’

‘অন্যদিকে এই দুই দিনের জনসভাকে কেন্দ্র করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শত শত নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। হয়রানিমূলক গ্রেফতার বন্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আশ্বাসের পর একদিনে এক হাজার ২০০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যে দুটো ব্যাপারে সরকারপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিল সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যখন অবিশ্বাস্য রকম বৈপরীত্য দেখা যায়, তখন আমাদের ধরেই নিতে হয়, সরকার আসলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ন্যূনতম সমঝোতা করার ক্ষেত্রে আন্তরিক ছিল না।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে তার দায়িত্ব পালন না করে সরকারের অাজ্ঞাবহ হয়ে থেকেছে। সেটা এই কমিশনের অধীনে হওয়া নির্বাচনগুলো দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যায়। সেই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার নির্ধারিত ৯০ দিনের ৩৫ দিন বাকি থাকতেই তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করল কমিশন। অথচ ১৯৯৬ সালে নির্ধারিত ৯০ দিন সময় শেষ হওয়ার ১৩ দিন আগে, ২০০১ সালে ১২ দিন ও ২০০৪ সালে ২০ দিন আগে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছিল।’

‘তফসিল ঘোষণার পর দেশের নানা স্থানে সরকারি দলের আনন্দ মিছিলই প্রমাণ করে নির্বাচন কমিশন আসলে সরকারের চাহিদামতো তফসিল ঘোষণা করেছে। সরকারি দলের তফসিল পেছানোর আহ্বান না জানানো এবং নির্বাচন কমিশনের তড়িঘড়ি তফসিল ঘোষণা আবারও প্রমাণ করে সরকার আসলে আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমঝোতা চায়নি। এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, সরকারের যাবতীয় চেষ্টার উদ্দেশ্য হলো, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নির্বাচনের বাইরে রেখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করা।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা আ স ম আবদুর রব, বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অলি আহমেদ প্রমুখ।

ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, তাদের সিদ্ধান্ত গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে।

তিনি ১১ নভেম্বর, রবিবার বিকেলে এখানে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় দলীয় সভাপতি হিসেবে বক্তৃতাকালে বলেন, ‘নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারাকে শক্তিশালী করবে।’

আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তের জন্য সকল রাজনৈতিক দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটাতে আমরা একসাথে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই এবং যে দল জনগণের ভোট পাবে তারা নির্বাচনে জিতবে।’

তিনি বলেন, চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে এক সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপে ‘আমরা একটি অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিরোধী দলগুলো সংলাপে বিশেষ কিছু দাবি তুলেছে এবং আমরা সেগুলোর অধিকাংশই মেনে নিয়েছি।’

তিনি বলেন, এখন তার সরকার নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে সবাই যেন সমান সুযোগ পায়, তা নিশ্চিতে সতর্ক থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭০টি রাজনৈতিক দলের ২৩৪ জন রাজনৈতিক নেতা সংলাপে অংশ নিয়েছেন, যা ২০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চেলেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে এবং তার দল সব সময় চায় উন্নয়নের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকুক এবং এই ধারা যাতে থেমে না যায়।

শেখ হাসিনা বলেন, তার দল ৩০০টি নির্বাচনি আসনের প্রত্যেকটিতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য সেরা প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার চেষ্টা করবে। তবে কিছু আসন দলের মিত্রদের ছেড়ে দেওয়া হবে।

দলের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও রাশেদুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

Comments

comments

More Stories

১ min read
১ min read
১ min read
error: Content is protected !!