মে ২, ২০২৪ ৯:২৪ অপরাহ্ণ || ইউএসবাংলানিউজ২৪.কম

হোমিও-ইউনানি ডিগ্রিধারীরা ডাক্তার শব্দ ব্যবহার করতে পারবেন না

১ min read

হোমিওপ্যাথিক ও ইউনানি চিকিৎসাশাস্ত্রে ডিগ্রিধারী কোনো ব্যক্তি নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে এসব বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন আদালত।

এ সংক্রান্ত জারি করা রুল খারিজ করে শনিবার (১৪ আগস্ট) বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ৭১ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করেছেন।

রায়ে বলা হয়েছে, দুঃখজনকভাবে এটি লক্ষ্যণীয় যে, এখানে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ এর ২৯ ধারা অনুযায়ী বিএমডিসি এর নিবন্ধনভুক্ত মেডিকেল বা ডেন্টাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার (Dr.) পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। সেখানে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বিগত ২০১৪ সালের ৯ মার্চ তারিখের সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে ‘অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার’ (Alternative Medical Care) শীর্ষক অপারেশনাল প্লানের বিভিন্ন পদে কর্মরত হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক কর্মকর্তাদের স্ব-স্ব নামের পূর্বে ডাক্তার (ডা.) পদবি সংযোজনের অনুমতি প্রদান করেছে, যা এক কথায় আইনের কর্তৃত্ব ব্যতিত তথা বেআইনি।

এছাড়াও বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ড কর্তৃক ইংরেজি ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন শাখায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদেরকে তাদের নামের পূর্বে পদবি হিসেবে ডাক্তার (Dr.) ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করাও বেআইনি।

রায়ে বলা হয়, বিকল্পধারার চিকিৎসা পদ্ধতির পেশাধারীরা নামের আগে ইন্ট্রিগ্রেটেড ফিজিশিয়ান (Integrated Physician), কমপ্লিমেন্টারি ফিজিশিয়ান (Complementary Physician), ইন্টিগ্রেটেড মেডিসিন প্র্যাকটিশনার (Integrated Medicine Practitioner) এবং কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিন প্র্যাকটিশনার (Complementary Medicine Practitioner) পদবি ব্যবহার করতে পারেন। পাশের দেশ ভারতেও বিকল্প ধারার চিকিৎসকরা (Dr.) লিখতে পারে না।

রায়ে হোমিও-ইউনানি তথা বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

রায়ে বলা হয়, বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি পাঁচ হাজার বছরের প্রাচীন। সুতরাং পাঁচ হাজার বছর ধরে পুরো পৃথিবীতে চলে আসা প্রাচীন বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির যথাযথ এবং সঠিকভাবে পঠন এবং প্রশিক্ষণ জনমানুষের সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন করবে। প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি তথা পশ্চিমা চিকিৎসা পদ্ধতি আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হওয়া শুরু হয় আজ থেকে মাত্র ১৬২ বছর আগে। পৃথিবীর প্রথম প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির আইনটির নাম ‘দ্য মেডিকেল অ্যাক্ট, ১৮৫৮’ (The Medical Act, 1858), যা ইংল্যান্ডের সংসদ পাস করেছিল। অর্থাৎ ১৮৫৮ সালের আগে চিকিৎসা ব্যবস্থা আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল না। অপরদিকে পাঁচ হাজার বছর আগে থেকে মানুষ বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করে আসছে।

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৯ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হয়েছে। অর্থাৎ চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা প্রত্যেক নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার। প্রত্যেক নাগরিক তার বিবেকের মাধ্যমে এবং চিন্তার মাধ্যমে কোন পদ্ধতির চিকিৎসা তথা প্রচলিত/পশ্চিমা/অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহণ করবেন নাকি বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করবেন এটি সম্পূর্ণ তার মৌলিক অধিকার।

অপরদিকে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪০ অনুযায়ী আইনের দ্বারা অরোপিত বাধানিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের যেকোনো পেশা (Profession) গ্রহণের অধিকার তার মৌলিক অধিকার। একজন নাগরিক প্রচলিত চিকিৎসক হবেন না বিকল্প ধারার চিকিৎসক হবেন এটি তার মৌলিক অধিকার।

সুতরাং বিকল্প ধারার কিংবা প্রচলিত চিকিৎসক হওয়ার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো প্রস্তুত করে দেওয়া সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।

রায়ে আরও বলা হয়, ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে ‘কাজাখাস্তান ঘোষণা’ থেকে ‘আলমাআটা ঘোষণা’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সার্বিক পরিকল্পনা, নীতিমালা এবং প্রয়োজনীয় আইন দ্রুত প্রণয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে পরামর্শ দেওয়া হলো।

সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় তথা প্রচলিত এবং বিকল্প ধারার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় ‘রোগীকেন্দ্রিক চিকিৎসা সেবা’ নীতিমালা অনুসরণের পরামর্শ দেওয়া হলো।

প্রয়োজনে বিকল্প ধারার চিকিৎসা পদ্ধতির পৃথক মন্ত্রণালয় তথা ‘মিনিস্ট্রি অব আয়ুশ গভর্নম্যান্ট অব ইন্ডিয়া’ এর আদলে বাংলাদেশের একটি পৃথক মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করার পরামর্শ দেওয়া হলো।

এর আগে হোমিওপ্যাথিক ও ইউনানি চিকিৎসা শাস্ত্রে ডিগ্রিধারীরা নামের পূর্বে ডাক্তার ব্যবহারের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ে করেছিলেন। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রুল জারি করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম ও অ্যাডভোকেট খোন্দকার নীলিমা ইয়াসমিন। অপরপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম।

Comments

comments

More Stories

১ min read
১ min read
১ min read

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!