মার্চ ২৮, ২০২৪ ৯:২৫ অপরাহ্ণ || ইউএসবাংলানিউজ২৪.কম

দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ

১ min read

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের এক দিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে দাম দ্বিগুণ হয়েছে। গেল সোমবার ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০-৬০ টাকা দরে বিক্রি হলেও গতকাল মঙ্গলবার বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা দরে। খুচরার পাশাপাশি পণ্যটির দাম বেড়েছে পাইকারি বাজারেও। ক্রেতাদের আশঙ্কা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া না গেলে গত বছরের মতো এবারও পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী হতে পারে। তবে এবার কোনোভাবেই এ অবস্থার সৃষ্টি হবে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এজন্য বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ের প্রশাসনকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে খোলাবাজারে বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। পাশাপাশি পণ্যটি আমদানির জন্য বিকল্প বাজারও খোঁজা হচ্ছে। অন্যদিকে আজ বুধবার দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আগের টেন্ডার করা পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করতে পারে বলে জানিয়েছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না করলে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কথা নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, দেশে প্রতি বছর প্রায় ২৩ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। তবে এর মধ্যে কিছু নষ্ট হয়ে যায়, এরপর প্রায় ১৯ লাখ টন পেঁয়াজ থাকে। অথচ চাহিদা রয়েছে ৩০ লাখ টন পেঁয়াজের। বাকি ১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়, যার বেশিরভাগই আসে ভারত থেকে। তবে এবার ভারী বর্ষণে চাষাবাদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম বাড়ায় ভারত রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, সাত দিনের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আনা হবে। এছাড়া চীন, তুরস্ক ও মিসর থেকে পেঁয়াজ আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে বাজারে কঠোর মনিটরিংয়ের পাশাপাশি টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজের বিপণন বাড়ানো হবে।

তিনি বলেন, গত বছর থেকে আমাদের তো কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা সম্ভব হলে পরিস্থিতি ভালো হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনোভাবেই গত বছরের মতো পরিস্থিতি এবার হবে না। কারণ দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ রয়েছে। হয়তো ৩০-৪০ টাকা বাড়বে কিন্তু গত বছরের মতো অত দামেও বিক্রি হবে না। আমরা বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিচ্ছি। আশা করছি, অন্যান্য জায়গা থেকে পেঁয়াজ এনে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারব।

তবে গতকাল রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, রামপুরা, মালিবাগ, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। অথচ সোমবার দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ৬০ থেকে ৬৫ এবং আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, হঠাৎ করেই পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। সোমবার পাইকারিতে যে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৫০, তা আজ (গতকাল) ৭৫-৮০ টাকা হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে মিরপুরের মুসলিম বাজারের ব্যবসায়ী আরিফ হোসেন বলেন, পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে। কারণ এখন থেকেই পেঁয়াজ কেনার পরিমাণ বেড়ে গেছে। এ অবস্থা চললে বাজারে পেঁয়াজের এক ধরনের কৃত্রিম সংকট দেখা দিতে পারে। তবে আবারও গত বছরের মতো অবস্থা হবে কি না বলা মুশকিল।

অপর ব্যবসায়ী আয়নাল হোসেন বলেন, আমি ৮০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করছি। একজন এসে পাঁচ কেজি পেঁয়াজ কিনে নিয়ে গেলে। এরপর কয়েকজন এসে বেশি বেশি পেঁয়াজ কিনছেন বলে মনে হলো। তিনি বলেন, এমন হুড়াহুড়ি করে পেঁয়াজ আমি আগে কখনো বিক্রি করিনি। হয়তো পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে এমন আশঙ্কাতেই সবাই বেশি বেশি কিনছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজধানীর শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি হাজি মোহাম্মদ মাজেদ বলেন, ভারত পেঁয়াজের রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পরপরই বিক্রি বেড়ে গেছে। সোমবারের আগে যে পেঁয়াজ ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, মঙ্গলবার সেটা ৬০-৭০ টাকা বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, তবে এবার পেঁয়াজের দাম আগের বছরের মতো বাড়বে না। সরকার যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে। শিগগিরই এর ফলাফল দেখা যাবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে নয়টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাজার মনিটরিং জোরদারকরণের জন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, দেশের আট বিভাগীয় কমিশনার, দেশের ৬৪ জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ফরিদপুর, পাবনা, রাজবাড়ী ও নাটোর এ চার জেলার জেলা প্রশাসকদের পেঁয়াজের উৎপাদন, মজুদ, সরবরাহ এবং মূল্য পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য বাণিজ্য সচিব ডিও লেটার দিয়েছেন। পেঁয়াজের বিষয়ে দ্রুত সঙ্গনিরোধ সনদ ইস্যু করার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আমদানিকারকদের এলসি খোলাসহ সার্বিক সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। এছাড়া পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আমদানি করা পেঁয়াজ স্থলবন্দর থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ছাড় করতে এবং আমদানিকারকদের সহযোগিতা করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পেঁয়াজের ওপর ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আপাতত প্রত্যাহারের জন্য এনবিআর চেয়ারম্যানেরে কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

বাজার সরবরাহ স্বাভাবিক ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে আমদানি করা পেঁয়াজ বেনাপোল, ভোমরা, সোনা মসজিদ ও হিলি স্থলবন্দর থেকে দ্রুততম সময়ে ছাড় করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থলবন্দর চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পেঁয়াজের উৎপাদন, মজুদ ও মূল্য পরিস্থিতি সংক্রান্ত তথ্য জোগাড় করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তিনজন যুগ্ম সচিবকে পাবনা, নাটোর, রাজবাড়ী ও ফরিদপুরে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া স্থল ও নদীবন্দরে পেঁয়াজের আমদানি পরিস্থিতি, কনটেইনার জট ও কৃত্রিম সংকট রয়েছে কি না তা দেখে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য নিজ নিজ কর্র্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব জাফর উদ্দীনের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

মন্ত্রণালয়ের এ উদ্যোগের পাশাপাশি পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক রাখতে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকারি বিক্রয় প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবির)। প্রতিষ্ঠানটি সারা দেশে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে। সামনের দিনে ই-কমার্সের মাধ্যমে পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রি করে বাসায় বাসায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণে ট্রাকে পেঁয়াজ বিক্রির পরিমাণ বাড়ানো হবে।

এ প্রসঙ্গে টিসিবির মুখপাত্র মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা বেশ কিছুদিন ধরেই ২৮৫টি পয়েন্টে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছি। সেই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি অন্যান্য দেশ থেকেও পেঁয়াজ আমদানির যে নিয়মিত প্রক্রিয়া, সেটাও অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলে ট্রাকে পেঁয়াজ বিক্রির পরিমাণ বাড়ানো হবে। গতবারের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না বলে আশা করি।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে বিদেশ থেকে এক দিনে প্রায় ১১ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আনার জন্য আমদানি অনুমতিপত্রের (আইপি) জন্য আবেদন করেছেন ব্যবসায়ীরা। গত সোমবার ভারতের রপ্তনি বন্ধের ঘোষণার পর থেকেই ঘণ্টার ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা।

এরপরও গতকাল অনেক আড়তদার পেঁয়াজ খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি বন্ধ রাখেন। খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি ইদ্রিস বলেন, আমদানি বন্ধ ঘোষণার পরেই আমদানিকারকরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এমনকি যেসব অর্ডার ছিল সেগুলোও তারা পাঠাননি। কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন মিয়ানমার-তুরস্কের পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম কমবে। তার মতে  অতিমাত্রায় পেঁয়াজের বাজার ভারত নির্ভরশীলতার কারণে এমনটি হয়েছে।

খাতুনগঞ্জের মসলাজাতীয় পণ্যের এক আমদানিকারক বলেন, ‘আগে পেঁয়াজ আমদানি করতাম এখন করি না। কারণ আড়তদাররা দাম বাড়িয়ে আমদানিকারকের ঘাড়ে চাপিয়ে দেন দোষ। তাছাড়া ভারত থেকে আমদানি করার জন্য এলসি খুললে দেখা যায় মিয়ানমারের দাম কমে যায়। আবার মিয়ানমার থেকে আনলে দেখা যায় ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কমে যায়। এখানে দুই দেশের সিন্ডিকেট জড়িত। আর আড়তদাররা হচ্ছেন আসল মাফিয়া। খাতুনগঞ্জ বাজারে আড়তদার এবং বেনাপোলের ব্যবসায়ীরা হচ্ছেন একজোট।’

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের তথ্যমতে, গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে সোমবার পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ১০১ টনের আইপি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট ৫৪টি আইপির বিপরীতে ১৯ হাজার ৮৪৩ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র দেওয়া হয়েছে।

হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ হারুন জানান, মঙ্গলবার রাতে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা আমাদের জানিয়েছেন যে বুধবার থেকে আগের টেন্ডারকৃত পেঁয়াজগুলো রপ্তানির অনুমতি দিতে পারে ভারত সরকার। যার ফলে বাংলাদেশে পেঁয়াজ ঢোকার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে গত রবিবারে যেসব এলসির বিপরীতে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে, সেগুলোর পেঁয়াজ রপ্তানি হতে পারে বলে তারা আমাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।

সিলেট চেম্বার অব কমার্সের নেতৃবৃন্দ বলছেন, পেঁয়াজের বাজারের এই ঊর্ধ্বগতি বেশিদিন থাকবে না। ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে, শিগগিরই পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের কিছু করার নেই। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।  সিলেটের কালিঘাট বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, পেঁয়াজ দীর্ঘদিন মজুদ রাখা যায় না। সিলেটের ব্যবসায়ীদের কাছে খুব বেশি পেঁয়াজ মজুদ নেই। এরপরও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে যাতে দাম বাড়ানো না হয়, সে ব্যাপারে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ সতর্ক রয়েছেন।

Comments

comments

More Stories

১ min read
১ min read
১ min read

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!