তাজুল ইমাম পেলেন ‘ঘুংঘুর’ সম্মাননা-২০২১
১ min read
প্রবাসে সর্বজন শ্রদ্ধেয় মুক্তিযোদ্ধা, চিত্রকর, শব্দজন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী তাজুল ইমাম। তাজুল ইমাম। স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনে তরুণ বয়সে যুদ্ধে নেমেছিলেন। পরবর্তীকালে তার শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে নিরলসভাবে অবদান রেখে চলেছেন নিজের মতো করে। চট্টগ্রামে এক সময় অন্য শিল্পী বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ব্যান্ডদল সোলস। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় এই ব্যান্ডদলটির হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। লিখেছেন অসংখ্য গান। কণ্ঠও দিয়েছেন অনেক গানে। তাজুল ইমামের লেখা জনপ্রিয়তম গানটি হচ্ছে, ‘পলাশ ফুটেছে, শিমুল ফুটেছে’। দূর প্রবাসে থেকেও সুন্দর একটি বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নে কাজ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। সেকারণে গুণি এই শিল্পীর সামগ্রিক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে দেয়া হয়েছে “ঘুংঘুর সম্মাননা ২০২১”। উত্তর আমেরিকা থেকে প্রকাশিত লিটল ম্যাগাজিন ‘ঘুংঘুর’ এর নতুন সংখ্যার প্রকাশনা ও ‘ঘুংঘুর সম্মাননা’ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। ২৯ অক্টোবর, ২০২১ শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের একটি মিলনায়তনে এই জমকালো অনুষ্ঠানটি হয়। নিউইয়র্ক বইমেলা-২০২১ উপলক্ষে প্রকাশিত ‘ঘুংঘুর’-এর ২০তম সংখ্যা ঘিরেই ছিল এই আয়োজন।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী হারুন হাবীব ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক কবি মিনার মনসুর, মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ জিয়াউদ্দিন আহমেদ, টিভি ব্যক্তিত্ব বেলাল বেগ, প্রাবন্ধিক হাসান ফেরদৌস, খ্যাতিমান নাট্যাভিনেতা তৌকির আহমেদ ও প্রাবন্ধিক আহমাদ মাযহার। তরুণ শব্দশিল্পী মৃদুল আহমেদ এর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ‘ঘুংঘুর’ সম্পাদক, চিকিৎসক ও সুলেখক হুমায়ুন কবির।
‘ঘুংঘুর’ এর প্রকাশনা বিষয়ে বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরে ‘ঘুংঘুর’ সম্পাদনা পরিষদের অন্যতম সদস্য কবি ফকির ইলিয়াস স্বাগত বক্তব্যে বলেন, এই লিটল ম্যাগাজিনটি বিশ্বে একমাত্র বাংলা ছোটকাগজ যেটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সংস্করণ প্রকাশ করেছে। ঢাকা, কলকাতা, নিউইয়র্ক, জাপান, জার্মানী, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড থেকে এর কয়েকটি সংখ্যা ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ থেকেও এর ভবিষ্যত সংখ্যা প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে কবি ফকির ইলিয়াস বলেন, একটি লিটল ম্যাগাজিনই সাহিত্যের
মূল প্লাটফর্ম।’ঘুংঘুর’ সেই কাজটি করে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
বেলাল বেগ বলেন, এই লিটল ম্যাগাজিনটি একটি তাগিদ থেকে প্রকাশিত। আর তা হচ্ছে, মানুষের মাঝে লেখার আলো ছড়িয়ে দেয়া।তারা সেই কাজটি নিষ্ঠার সাথেই করছেন। প্রাবন্ধিক হাসান ফেরদৌস বলেন, ‘ঘুংঘুর’কে আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে।
হাসান ফেরদৌস সাহিত্যের পথ মসৃণ নয় উল্লেখ করে বলেন, নতুন বাঁক তৈরিতে লিটলম্যাগাজিনের ভূমিকার কথা ভুলে গেলে চলবে না। তিনি গুণী শিল্পী তাজুল ইমামকে একজন সব্যসাচী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে আখ্যায়িত করে তাঁর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরেন।
ডাঃ জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের জ্যোতি ধারণ করে এই ছোটকাগজটি বিশ্বের দেশে দেশে সংস্করণ করছে। লেখকদের একটি ছাতার ছায়ায় নিয়ে আসছে। তা খুবই আশা জাগানিয়া। তিনি তা অব্যাহত রাখার জন্য টিমকে আহ্বান জানান।
কবি মিনার মনসুর বলেন, বিদেশে এসে এমন কর্মকাণ্ড দেখে আমি অবিভূত। আজ যে কৃতি শিল্পীকে সম্মাননা দেয়া হচ্ছ- তিনি আমাদের সূর্যসন্তান। তিনি মহান মুক্তিযোদ্ধা। আমি তাঁকে এখানে সম্মান জানাতে পেরে গর্বিত। কবি মিনার মনসুর লিটলম্যাগাজিন ও সাহিত্য নিয়ে অনেক দরকারি কথা বলেন। নতুন লেখকদের সাহিত্য নির্মাণে অধ্যবসায়ের উপর গুরুত্ব দেন তিনি।
হারুন হাবীব বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধই একটি বড় ক্যানভাস। এই ক্যানভাসের একজন কর্মবীরকে আজ সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে। এটা গৌরবের বিষয়।আমি আনন্দিত, আমাদের সাহিত্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিকিরণ দিনে দিনে ছড়িয়ে পড়ছে। সেই আলোকেই বিদেশ থেকেও ছোটকাগজ বেরোচ্ছে। পৃষ্ঠপোষকতা হচ্ছে।
বক্তব্যে তৌকির আহমেদ বলেন, আমরা যখন এই বাংলাদেশে বেড়ে উঠি তখন সেই সত্তর দশকে দেশে শিক্ষিতের সংখ্যা কম ছিল। কিন্তু আমাদের লোকজ ঐতিহ্যমণ্ডিত একটি সমাজ ছিল। সেই সমাজ কিন্তু শান্তিময় ছিল,সম্প্রীতিময় ছিল। আজ শিক্ষিতের হার বেড়েছে। কিন্তু সেই অহংকার,শান্তি ধূসর হয়ে গিয়েছে। তাহলে শিক্ষিত হয়ে কী পেলাম আমরা! এই অবস্থার অবসান দরকার। আমাদের অগ্রসরমানতা সমানভাবে এগিয়ে নিতে হবে।
আহমাদ মাযহার বলেন,’ঘুংঘুর’ অনেক কিছুই পেরেছে তা আমি বলি না। তবে কাজ করছে এটাই আশার কথা। সাহিত্যে কাঠামো নির্মাণই বড় কাজ। নতুন লেখককে জায়গা করে দেয়াও কম কথা নয়।
‘ঘুংঘুর’ এর সম্পাদনা পরিষদের সদস্য লেখক ডাঃ শাহাব আহমেদ অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ‘ঘুংঘুর’ এর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে পরিশুদ্ধ সাহিত্যসেবার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
সাহিত্য একাডেমি নিউইয়র্কের পরিচালক, বিশিষ্ট সংগঠক মোশাররফ হোসেন শুভেচ্ছা বক্তব্য পর্বে বলেন, এই অভিবাসে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চাই। এজন্য সাহিত্য একাডেমি ‘ঘুংঘুর’ এর সহযাত্রী হিসেবে কাজ করবে।
বক্তাদের কথায় তাজুল ইমামের কর্ম ও জীবনই প্রাধান্য পায় এবং তারা বলেন, এই গুণীজন মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও প্রজন্ম গঠনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। আঁকায় কিংবা গানে, লেখায় কিংবা কথায়- তাঁর উচ্চারণ অত্যন্ত শাণিত। তিনি একজন পরিশুদ্ধ বাঙালীর পথিকৃৎ। আমরা আজ তাঁকে এখানে সম্মান জানাতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত।
‘তাজুল ইমামের কর্ম ও জীবন’ শীর্ষক ১২ মিনিটের একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয় অনুষ্ঠানে। শর্টফিল্ম নির্মাতা নজরুল কবীর এটি নির্মাণ করেন।
সর্বজন শ্রদ্ধেয় তাজুল ইমাম বলেন, এত ভালোবাসা আমার প্রাপ্য নয়। আমি তরুণ বয়সে দেশ মাতৃকার জন্য অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিলাম। সেই যুদ্ধ আজও করছি, প্রজন্মকে এগিয়ে নেয়ার জন্য। আমি একটি অসাম্প্রদায়িক, মানবিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। ‘ঘুংঘুর’ ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
বক্তব্যের পরেই তাঁর হাতে সম্মানের ক্রেস্ট তুলে দেন উপস্থিত গুণীজন। সমাপণী বক্তব্যে হুমায়ুন কবির সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। বিশেষ করে মিশুক সেলিম, আবু সাঈদ রতন, খালেদ সরফুদ্দীন, মাসুম আহমেদ, আহমেদ ছহুল, সাদেক শিবলী,জাহেদ শরীফসহ ঘুংঘুর টিম ও উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। নৈশভোজের মাধ্যমে ইতি টানা হয় টানা আড়াইঘন্টার অনুষ্ঠানের । এর আগে ‘ঘুংঘুর সম্মাননা’ পেয়েছিলেন টিভি ব্যক্তিত্ব বেলাল বেগ, প্রাবন্ধিক হাসান ফেরদৌস।
উল্লেখ্য, মিশুক সেলিমের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়।