কলম্বাস (৩য় পর্ব)
১ min readউদ্বৃত ইটালিয়ানটাকে উচিত শিক্ষা দেবার জন্য প্রচুর ক্ষমতা দিয়ে পাঠানো হলো স্পেনের একরাজপুরুষ , ফ্রান্সেসকো বোবাডিলা কে, কলাম্বাসের নব আবিস্কৃত হিসাপানিওলাতে তিনি পৌঁছেই কলম্বাসের ভাইকে তলব করলেন এবং সব ক্ষমতা বুঝিয়ে দিতে হুকুম দিলেন কিন্তু সে সময় কলম্বাস অন্য জায়গায় থাকায় তার ভাই ডিয়াগো কলাম্বাস অপরাগতা প্রকাশ করলে বোবাডিলা ক্ষেপে গিয়ে তাকে ও ক্রিস্টাফর কলম্বাসের ছেলে কে আটক করে এবং কলাম্বাসের বাসায় গিয়ে সমস্ত কাগজপত্র ও আসবাব পত্র তছনছ করে বাজেয়াপ্ত করে খবর পাঠালেন ফোর্ট কনসেপসনে কলম্বাসের কাছে যে অতি শীঘ্রই এসে নতি স্বীকার করতে।
এই খবর পেয়ে কলম্বাস স্তম্ভিত হলেন,অথচ তখন তিনি সেখানে বিদ্রোহ দমনে ব্যাস্ত ছিলেন।প্রথমে তার এ কথা বিশ্বাসই হতে চায়নি, পরে যখন রানীর শিলমোহর দেখলেন তখন ভীষন কস্ঠ পেলেন।নীরবে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে রইলেন দীর্ঘক্ষন।
তিনি ইচ্ছা করলে এই আদেশ অনায়াসে অমান্য করতে পারতেন , বোবাডিলা কে নাকানি চুবানি খাইয়ে গুম করে দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা কিছুই করলেন না। রানীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধায় মাথানত করে বোবাডিলার সাথে দেখা করতে গেলেন, বোবাডিলা কোন কথা না বলে কলাম্বাস কে সোজা কারাগারে নিক্ষেপ করলেন।
কলাম্বাসের বন্দীর খবর পেয়ে ঐ দেশে অরাজকতা শুরু হয়ে গেলো , শাসন বলে আর কিছুই অবশিষ্ট রইল না, পথে প্রান্তরে মারামারি অশ্লীল গালাগালি আর সুযোগ পেলেই মেয়েদের উঠিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো ,জেলে বসেই এ সব শুনতে পেয়ে কলাম্বাস খুবই মর্মাহত হলো ।দিনের পর দিন অতিবাহিত হলো কিন্তু রানী বা রাজার কাছ থেকে কোন খবর এলো না, পরে তিনি ভাবতে লাগলেন হয়তো আর কোনদিন স্বদেশ বা স্পেনে তার আর ফেরা হবে না, এখানেই হয়তো সারা জীবন কস্টের মাঝেই থাকতে হবে।
বেশ কিছুদিন পর কারাগারের ফটক খুলে গেলো,এবার কলাম্বাসের মনে হলো হয়তো তাকে এবার ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে।তবুও আশায় বুক বাঁধলেন রানীমাতা নিশ্চয় সদয় হবেন,অবশেষে কারারক্ষী বিনয়ের সাথে জানালো, এখন জাহাজে করে তাকে স্পেনে নিয়ে তার বিচার করা হবে।হাতের শিকল খোলার জন্য এগিয়ে এলো এক সেপাহী কিন্তু কলাম্বাস দৃঢচিত্তে জানালো , না ।রানীর হুকুমে হাতে যখন শিকল পড়ানো হয়েছে তখন শিকল খোলা হবে রানীর আদেশেই।যদিও এটি ছিলো তার অভিমানের কথা,তিনি ভাবতেন এই অপমানের শিকল স্মৃতি হিসাবে সারা জীবন রেখে দেবেন তাই পরবর্তি সময়ে সেই শিকল কলাম্বাসের টেবিলের কাছে ঝুলিয়ে রাখতেন, সেইসাথে তিনি তার ছেলেকে বলে গিয়েছিলেন মৃত্যুর পর যেনো উক্ত শিকল টি তার কফিনের ভিতর দিয়ে দেওয়া হয় ।
১৫০০ সালের ২৫ নভেম্বর শিকল পড়ে স্পেনের বন্দরে নামলেন, নিজেকে খুব অপমানিত মনেহলো ।তার শরীরও ভেঙে পড়েছিলো , তিনি রানী ইসাবেলার শিশু পুত্র রাজকুমার ডন জুয়ানের ধাত্রীকে এক চিঠি লিখলেন , সেই চিঠি পড়া হলো রানীর সামনে ,সেই চিঠিতে ছিলো প্রচন্ড আবেগ ভরা মনের বেদনা, যা শুনে রানী তৎক্ষনৎ কলাম্বাসের শিকল খুলে দেবার আদেশ দিলেন এবং তাকে নিজের মর্যাদার পোষাকে রাজসভায় হাজির হতে বলা হলো। এলে পরে বিচার হবে সেটিও জানানো হলো।
যথাসময় বিচার আরম্ভ হলো ,তবে সেই বিচার পৃথিবীর ইতিহাসে এত সংক্ষিপ্ত যা আর কখনো কোনদিন দেখা বা শুনা যায়নি ।বাদী-প্রতিবাদী কেউ একটিও কথা বলেনি , বিচার হয়ে গেলো বিচারের রায়ও হয়ে গেলো।সেদিনের সেই বিচার সভা কেমন হয়েছিলো ?
দীর্ঘদেহী ক্রিস্টোফার কলম্বাস রাজসভায় এসে দাঁড়ালেন মাথা উঁচু করে তবে চোখ ছিলো মাটির দিকে, ক্ষনকাল পরে চোখ তুলে রানীর পানে তাকালেন । চোখাচোখি হলো দুজনের চোখেই পানি টলটল করছে বাধভাঙ্গা জোয়ারের মতো অশ্রু গড়িয়ে পড়লো ।ধীরে ধীরে আসামী কলম্বাস রাজা-রানীর সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসলেন, একটি কথা ও প্রকাশ করতে পারছিলেন না,কিছুক্ষন পরে কান্নাজডিত কন্ঠে বল্লেন,-আমি তো বিশ্বাস ভাঙিনি, আমি তো বিশ্বাস ভাঙিনি ।তার এই কান্না ধন্বিত প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠল রাজ দরবারে।
এখানেই বিচার শেষ হয়ে গেলো ,রাজা প্রতিশ্রুতি দিলেন কলম্বাস তার সমস্ত কিছু ফিরে পাবে মান সম্মান সব।হঠাৎ রানী মারা গেলেন আর রাজাও ভোল পাল্টে কলম্বাস কে দেওয়া তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলেন।বলাবাহুল্য রানী ইসাবেলার মৃত্যুর পর কলম্বাস রাজদরবার থেকে উপেক্ষিত হলেন, কোন চাকরি না পেয়ে খুব কস্ঠে জীবন ধারন করতে লাগলেন।রাজা মুখ ফিরিয়ে নিলেও দেশের জনগন ঠিকই কলম্বাস কে ভালবেসে ছিলো।
(চলবে)
-ফাহীম রেজা নূর