ভারতকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
১ min read![](https://usbanglanews24.com/wp-content/uploads/2020/02/champ-2020.jpg)
অবশেষে চরম অনিশ্চয়তার ম্যাচটিকে সম্ভবে পরিণত করলেন অধিনায়ক আকবর আলির অসাধারণ ব্যাটিং। ক্ষণে ক্ষণে বাঁক পরিবর্তন। পেন্ডুলামের মত দুলতে দুলতে থাকা ম্যাচটিতে স্নায়ুর চাপ বাড়ছিল মুহূর্তে মুহূর্তে। উদ্বোধনী জুটিতে ৫০ ওঠার পর যেভাবে ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল বাংলাদেশ, সেখান থেকে জয় সম্ভব- এটাই ছিল যেন দুঃস্বপ্ন।
পচেফস্ট্রমের সেনওয়েজ পার্কের সমর্থকরা সত্যিকার একটি ফাইনাল ম্যাচ উপভোগ করলো। ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানোর ম্যাচটিতে সব বিভাগে শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েই চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। ভারতের মত শক্তিশালী দলকে ২৩ বল হাতে রেভে ৩ উইকেটের ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারেরমত যুব বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের অধিনায়ক আকবর আলি কি অসাধারণ ব্যাটিংটাই না করলেন! একের পর এক যখন উইকেট পড়ছিল, তখন একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। ৭৭ বলে ৪৩ রান করলেন আকবর। রাকিবুল হাসান ৯ রান করে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের প্রয়োজন যখন ৫৪ বলে ১৫ রান। জয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে তখন বাংলাদেশ। এমন সময়ই পচেফস্ট্রমের সেনওয়েজ পার্কে নেমে আসে বৃষ্টি। ফলে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় বাংলাদেশের রান ছিল ৪১ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৬৩।
বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার পর খেলা শুরু করার সময় বৃষ্টি আইন ডি/এল মেথডে ওভার কেটে নেয়া হয় চারটি। বাংলাদেশের লক্ষ্যও কমিয়ে দেয়া হয় ৮ রান। অর্থ্যাৎ, রিভাইজ লক্ষ্য দেয়া হয় ৩০ বলে ৭ রান। এরপর মাঠে নেমে রাকিবুল হাসানের বাউন্ডারি এবং তার একটি সিঙ্গেল ও আকবরের এক সিঙ্গেলে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। সে সঙ্গে মাথায় পরে নেয় চ্যাম্পিয়নের মুকুট।
দুই ওপেনারের ব্যাটে শুরুতেই বাংলাদেশ জবাব দিতে শুরু করে ভারতকে। বিশ্বকাপ জয়ের জন্য ১৭৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটাই দুই ওপেনার করেছিলেন উড়ন্ত। ওপেনিং জুটিতেই উঠে যায় ৫০ রান। কিন্তু ওপেনারদের এই দারুণ জুটিটাকে কাজে লাগাতে পারছে না পরের ব্যাটসম্যানরা। হারাচ্ছে একের পর এক উইকেট। ৫০-৬৫ – এই ১৫ রানের মধ্যেই বাংলাদেশ হারিয়েছে ৪ উইকেট।
দলের সেরা সেরা চারজন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে দারুণ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছে বাংলাদেশ যুব ক্রিকেট দল। বিশ্বকাপের শিরোপা কি তাহলে সুদুর পরাহতই হয়ে থাকবে?
পারভেজ হোসেন ইমন এ সময় কিছুটা ব্যথা পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যান। মাঠে নামেন অধিনায়ক আকবর আলি। তিনি আর শামিম হোসেন মিলে ২০ রানের জুটি গড়েন। ৮৫ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৭ রানে আউট হয়ে যান শামিম হোসেন। এরপর জুটি বাধেন অধিনায়ক আকবর আলি এবং অভিষেক দাস। এ দু’জনের ব্যাটে গড়ে ওঠে ১৮ রানের জুটি। ৭ বলে ৫ রান করে এ সময় আউট হয়ে যান অভিষেক দাস। এরপর আবার মাঠে নামেন পারভেজ হাসান ইমন। জুটি বাধেন আকবর আলির সঙ্গে। এ দু’জন মিলে দেশে-শুনে খেলে গড়েন ৪১ রানের জুটি। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে খেলে ৭৯ বলে ৪৭ রান করেন পারভেজ হোসেন ইমন।
১৪৩ রানের মাথায় পারভেজ আউট হয়ে গেলেও রাকিবুল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে একাই লড়াই করে যান আকবর আলি। রাকিবুল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে অষ্টম উইকেট জুটিতে জয়ের অসমাপ্ত কাজটিকে সমাপ্ত করলেন আকবর। ১৭৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দুর্দান্ত জুটি গড়ার পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যান দুই ওপেনার। ১৭ রান করে সাজঘরে ফিরে যান তানজিদ হাসান। ২৫ বল মোকাবেলা করে ২টি বাউন্ডারি এবং ১টি ছক্কা মারেন তিনি। তানজিদ হাসান আউট হওয়ার পর মাঠে নামেন মাহমুদুল হাসান জয়। আগের ম্যাচে যার ব্যাট থেকে এসেছিল দারুণ এক সেঞ্চুরি। কিন্তু জয় আউট হয়ে যান মাত্র ৮ রান করে। দলের আরেক নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান তৌহিদ হৃদয় আউট হয়ে যান কোনো রান না করেই। শাহাদাত হোসেন বোকার মত স্ট্যাম্পিং হলেন মাত্র ১ রান করে। ১৭৮ রানের লক্ষ্য। ফাইনাল হলেও রান তাড়া করতে গিয়ে যখন ব্যাটসম্যানদের সামনে লক্ষ্যটা থাকে সহজমাত্রার, তখন চাপ থাকে খুবই কম। ফলে সাচ্ছন্দ্যে ব্যাট করে যাওয়া যায়।
বাংলাদেশ দলের দুই ওপেনার পারভেজ হাসান ইমন এবং তানজিদ হাসান ব্যাট করতে নামলেন পুরোপুরি চাপমুক্তভাবে। দেখে-শুনে খেলে বাংলাদেশ দলকে যতদুর এগিয়ে নেয়া যায়, সেটাই চিন্তা দুই ওপেনারের। তবে, ভারতীয় বোলারদের রীতিমত ভড়কে দিয়েই ব্যাট হাতে সূচনা করলেন দুই ওপেনার পারভেজ হাসান এবং তানজিদ হাসান। ৪ ওভারেই তারা তুলে ফেললেন ২৮ রান।
যেখানে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা শুরুতে বেশ ধুঁকে ধুঁকে ব্যাট করছিল বাংলাদেশের বোলারদের সামনে, সেখানে টাইগার ব্যাটসম্যানরা বাংলাদেশকে এনে দিলেন উড়ন্ত সূচনা। অতিরিক্ত রানের সংখ্যা দেখলেই বোঝা যায়, ভারতীয় বোলাররা কেমন খেই হারিয়েছে। ওয়াইড, নো কিংবা লেগ বাইতেই তারা এই রানগুলো দিল।