শ্রম (সংশোধন) আইন-২০১৮ এর অনুমোদন
১ min read
কর্মরত অবস্থায় শ্রমিকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ লাখ টাকা, আর আজীবনের জন্য অক্ষম তথা পঙ্গুত্ববরণ করলে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে মালিককে। অস্বাভাবিক মৃত্যুজনিত কারণে আগে ছিল ১ লাখ টাকা, পঙ্গুত্ববরণের ক্ষেত্রে ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
ক্ষতিপূরণের টাকা বাড়িয়ে এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক ও শ্রমিকদের বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি কমিয়ে, একইসঙ্গে নতুন কিছু ধারা সংযুক্ত করে বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন-২০১৮ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, শ্রম আইনের সংশোধনীতে বেশকিছু নতুন ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে। বেশকিছু ধারা ও উপধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ বাড়ানো হয়েছে, কমানো হয়েছে মালিক, শ্রমিকদের অপরাধের শাস্তি।
সচিব বলেন, শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য ২০০৬ সালে প্রথম এই আইনটি করা হয়েছিল। ২০১৩ সালে এটির অনেক বড় সংশোধন হয়। প্রায় ৯০টি ধারা সংশোধন হয়। আজকেও অনেকগুলো ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আইএলও (বিশ্ব শ্রম সংস্থা) এর কনভেনশন অনুযায়ী এটাকে (শ্রম আিইন) আপডেট করার জন্য অর্থাৎ শ্রমবান্ধব পলিসি সব জায়গায় যাতে নিশ্চিত হয় সেটার জন্য আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী শ্রম আইনটি আপডেট করে শ্রমবান্ধব করা হয়েছে।
নতুন আইনে শাস্তি কমানোর কথা জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রস্তাবিত আইনে মালিক ও শ্রমিকদের অসদাচরণ বা বিধান লঙ্ঘনের জন্য শাস্তি সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। আগে কারাদণ্ডের পরিমাণ ছিল ২ বছর। আর অসদাচরণ বলতে আইনের ১৯৬ ধারা লঙ্ঘন করার কথা বুঝানো হয়েছে। ধর্মঘট ডাকার ক্ষেত্রে আগে দুই তৃতীয়াংশ শ্রমিকদের সমর্থন লাগত নতুন আইন অনুযায়ী সেটা ৫১ শতাংশ হচ্ছে-বলেও জানান তিনি।
শফিউল আলম বলেন, নতুন আইনে প্রতিবন্ধীদের কোনোভাবেই বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত করা যাবে না। এই প্রবিশনটি নতুন সংযুক্ত করা হয়েছে আইনে। আর শিশু শ্রমিকদের কোনোভাবে কাজে নিয়োজিত করা যাবে না। যদি কেউ লঙ্ঘন করে শিশু শ্রমিক নিয়োজিত রাখেন তাহলে ৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে মালিককে।
শ্রম আদালতের মামলার ব্যাপারেও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শ্রম আদালতগুলো ৯০দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি তথা রায় দেবেন, কোনো কারণে সম্ভব না হলে পরবর্তী ৯০দিনের মধ্যে অবশ্যই রায় দিতে হবে, তথা মামলা শেষ করতে হবে। তাছাড়া মামলার আপিলের ক্ষেত্রেও একই সময় প্রযোজ্য হবে।
তিনি বলেন, আইনের ৪৭ ধারায় বলা হয়েছে, সন্তান সম্ভবা প্রসুতি শ্রমিক কর্মরত অবস্থায় ৪৮ সপ্তাহ এর প্রসুতিকালিন ছুটি পাবেন। সন্তান সম্ভবার প্রমাণ সাপেক্ষ আবেদনের তিনদিনের মধ্যে তাকে ছুটি দিতে হবে। কেউ যদি প্রসুতিকালিন সুবিধা বঞ্চিত করে তাহলে তাকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।
সচিব বলেন, মালিক যদি একদিনের উৎসব ছুটিতে কাজ করান তাহলে শ্রমিককে একদিনের বিকল্প ছুটি এবং দুইদিনের ক্ষতিপূরণ দেবেন। তাছাড়া শতভাগ রপ্তানিমুখী ও অন্যান্য শিল্প শ্রমিকদের জন্য গ্রুপবীমা নিশ্চিত করবে।