মা’কে নিয়ে যত কথা-আবু সাঈদ রতন
১ min read![](https://usbanglanews24.com/wp-content/uploads/2019/05/Mothers-day4.jpg)
ছোট্ট একটি শব্দ “মা”। নামটি উচ্চারণের সাথে সাথেই দেহ-মনে এক অজানা স্নেহের পরশ বয়ে যায়। পৃথিবীর যেকোন দেশেই “মা” উচ্চারণ করলেই “মা” কে বুঝে নেয়।এ এক অদ্ভুত যাদুকরী ডাক। আর এই “মা” কে নিয়েই সারা বিশ্বে পালিত হয় আন্তর্জাতিক “মা” দিবস।এ দিবসটি কেমন করে আসলো তা যদি আমরা পেছন ফিরে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো ছোট্ট একটি ইতিহাস।
প্রথম মা দিবস পালিত হয় ১০ মে ১৯০৮ সালে। আন্না জারিভিস নামে একজন মহিলা পশ্চিম ভার্জিনিয়ার সেন্ট এনড্রুস চার্চে প্রথম এই দিবসটি পালন করেন।আন্নার মায়ের নামে বা তার মা’র স্বরণে দিবসটি পালনকরা হয়। তখন চলছিল দেশটিতে গৃহযুদ্ধ। সেই যুদ্ধেঅনেক ছেলে-মেয়ে ও তাদের মা নিহত হয়। আন্নার মা চাইছিল সেই সমস্ত মায়েদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাজানিয়ে “মা” দিবস পালন করার জন্য। কিন্তু আন্না সেসময় দিবসটি পালন করতে ব্যার্থ হয়। কিন্তু আন্নার মায়ের মৃত্যুর পর তার মায়ের মৃত্যু দিনটিকে ঠিক করে মা দিবস পালন করে। আন্নার জন্ম ১৮৬৪ সালে এবং মৃত্যু ২৪ নভেম্বর ১৯৪৮ সালে। পরবর্তীতে ১৯১৪ সালের ৯মে রবিবার প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এর উদ্যোগে প্রথম জাতীয়ভাবে “মা” দিবস পালন করা হয়। এভাবেই প্রচলন হয় আন্তর্জাতিক মা দিবসের।
মে মাসের ২য় রবিবার এই দিবসটি পালন করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল মায়ের প্রতি ধন্যবাদ জানানো। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাবে মায়েদের এই ধন্যবাদ জানানো হয়। যাদের মা নেই তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এই মে মাসে আরো একটি দিবস উদযাপন করা হয়-তাহলো আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস। ১লা মে দিবসটি পালনকরা হয়। অর্থাৎ শ্রমিকদের অধিকার এবং শ্রমের মর্যাদা দেয়ার জন্য এই দিবসটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এই শ্রমের সাথে মায়ের নামটি চলে আসে সর্বাগ্রে। একজন মা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সংসারে এবং সংসারের বাইরে যে শ্রম দেয় তার মূল্য কি আমরা সঠিকভাবে দিতেপারি?
একজন মা তার সন্তানকে ১০ মাস ১০ দিন গর্ভে ধারণকরে যে কষ্টের মাঝে দিন পার করেন তা কি বর্ণনা করা যাবেনা কি অনুভব করা যাবে? তবুও মা হাসিমুখে সন্তানের সব বায়নাই পূরণ করার চেষ্টা করেন তার সাধ্যের মধ্যে। মাঝে মাঝে সাধ্যের বাইরেও করেন। আর আমরা সেই মাকে কতটুকু সময় দিতে পারি? সকল ধর্মেই মায়ের মর্যাদা এবং সম্মানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মা’কে সম্মান দিতে আবার দিবস কেন? মাকে তো প্রতিদিনই সম্মান জানাতে হবে-শ্রদ্ধা জানাতে হবে। এমন প্রশ্ন অনেকেই করেন।
বিভিন্ন জনের কাছে এবং বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, মানুষ তাদের কাজের প্রয়োজনে মা’কে ছেড়ে দূর-দূরান্তে থাকতে হয়। বছরে এই একটাদিন মা’কে ঘটা করে মনে করা, ধন্যবাদ জানানো, উপহার দেয়া এসব করতে পারলে নিজে যেমন আনন্দ পায় তেমন মা’কে একটু কাছে পেলে মা’ও প্রশান্তি লাভ করেন। আর যাদের মা বেঁচে নেই -তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশে প্রার্থনা করা, কবর জিয়ারত করা, দোয়া করা এসব করেই মা’কে স্বরণ করা হয়। সন্তানের কাছে “মা” যে কতো বড় আলাহর নিয়ামত তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
বিভিন্ন দেশেজাতী-ধর্ম- নির্বিশেষে এই “মা” দিবসে তাদের সাংস্কৃতিক রীতি অনুযায়ী স্বরণ করে। এই পৃথিবীতে মা’কে যে আমরা প্রাপ্য সম্মান দিতে পারি সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। শুধু একটি দিবসে স্বরণ করলেই হবে না, এই দিবসের ধারাবাহিকতা রাখতে হবে সারা বছর-সারাজীবন। শুধু ফেইসবুক বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একদিন স্ট্যাটাস দিয়েই দায়িত্ব পালন শেষ করলে হবে না। আত্মার বন্ধনে আবদ্ধ রাখতে হবে। মা’রা বেশী কিছু চায় না, সন্তানের কাছে একটি “মা” ডাক আর একটু সান্নিধ্য। সন্তানেরা সুখে থাকলেই যে মা খুশী হোন। পৃথিবীর সকল মায়েদের প্রতি রইলো শ্রদ্ধা, ভালবাসা- “মা” তুমি শুধুই “মা”।
-লেখক, সম্পাদক ইউএস বাংলা নিউজ, নিউইয়র্ক