“বাঙ্গাল কেন যুদ্ধে গেল” গ্রন্থের জমজমাট মোড়ক উন্মোচন
১ min read
ইউএস বাংলা নিউজ এর আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, গবেষক, ৭১ এর গেরিলা কমান্ডার সিরু বাঙ্গালি’র “বাঙ্গাল কেন যুদ্ধে গেল” গ্রন্থের জমজমাট মোড়ক উন্মোচন হলো। ৫ অক্টোবর, শুক্রবার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে বাংলাদেশ প্লাজা মিলনায়তনে এটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ইউএস বাংলা নিউজ এর সম্পাদক, কলামিস্ট আবু সাঈদ রতন এর সভাপতিত্ত্বে এবং নির্বাহী সম্পাদক ছড়াকার খালেদ সরফুদ্দীনের পরিচালনায় আনুষ্ঠানিকভাবে বইয়ের মোড়ক উম্মোচন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ৭১-এ সিরু বাঙ্গালি’র সতীর্থ তাজুল ইমাম।

অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা সিরু বাঙ্গালি’র বইয়ের উপর আলোচনা করেন তাজুল ইমাম, ৭১ এর শহীদ পরিবারের সন্তান ফাহিম রেজা নূর, সাপ্তাহিক ঠিকানার প্রধান সম্পাদক ফজলুর রহমান, ছড়াকার মঞ্জুর কাদের, কবি বেলাল বেগ।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাহিত্য একাডেমি-নিউইয়র্ক এর পরিচালক মোশাররফ হোসেন এবং লেখক, সাংবাদিক ইশতিয়াক রূপু।

“বাঙ্গাল কেন যুদ্ধে গেলো’ বই থেকে পাঠ করেন নিউইয়র্কের অন্যতম বাচিক শিল্পী মুমু আনসারী। তার আবেগময় পাঠ উপস্থিত সকলকে বিমোহিত ও বাকরুদ্ধ করে তোলে।
সিরু বাঙ্গালি’র বইয়ের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে বক্তারা সকলেই সিরু বাঙ্গালি’র বিরত্বের প্রশংসা করেন। তাঁর লেখা বই আগামী প্রজন্মকে পথ দেখাতে এবং মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে সহায়তা করবে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে ইতিহাস বিকৃত হচ্ছে তা সম্পর্কে সকলকে সজাগ থাকতে বলেন এবং সিরু বাঙ্গালি’র মত সকলকেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে আসার জন্য আহবান জানান।

বক্তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মুষ্টিমেয় কিছু রাজাকার ছাড়া সকলেই এই যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এবং সহযোগিতা করেছেন। যুদ্ধের সময়কার কঠিন দিনগুলোর কথাও স্বরণ করা হয়।

তাজুল ইমাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ৭১’এর মুক্তিযুদ্ধে শুধু মিলিটারিরাই অংশ নেননি, দেশের আপামর জনগণ এতে অংশ নেয়। সাধারণ মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের যেভাবে সহযোগিতা করেছে তা ভুলবার নয়। এই নিউইয়র্কেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে মানুষকে ভুল বুঝাবার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের এ বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে। সিরু বাঙ্গালি একজন প্রকৃত বীর।

ফাহিম রেজা নূর বলেন, “রাজাকার কোনদিন মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে না। সিরু বাঙ্গালি সাহসী, বীর, ৭১’এ যুদ্ধ করেছে, আবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়ও তিনি সাহসের সাথে স্বাক্ষী দিয়েছেন।
ঠিকানার প্রধান সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, “সিরু বাঙ্গালি’র মত মানুষের সাথে কথা বলে আমি আপ্লুত হয়েছি, তাঁর প্রতি আমার বিশেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। “বাঙ্গাল কেন যুদ্ধে গেল” বইতে তিনি পাঠকদের আঙ্গুল ধরে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন। তিনি বলেন ১৯৫২ সালেই আমরা শত্র“ চিনতে পেরেছি।

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মত আমাদের একত্রিত করেছেন। ১৯৭৫ পরবর্তী রেডিও টিভিতে বঙ্গবন্ধু নিষিদ্ধ ছিল। আমাদের অনেক কিছু ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমাদেরকে কাজে কর্মে খাটি বাঙ্গালী হতে হবে।

ছড়াকার মঞ্জুর কাদের বলেন, দীর্ঘ সময় এদেশের মানুষ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। রাজাকার ও এদের দোসররা ক্ষমতায় ছিল। রেডিও টিভিতে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস নিষিদ্ধ ছিল। তারপরও বাংলার মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সিরু বাঙ্গালি তাঁর বইতে যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের কথা লিপিবদ্ধ করেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

সাহিত্য একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, সকল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। এলাকার স্কুল কলেজের নামকরণ যদি সেই এলাকার কোন মুক্তিযোদ্ধার নামে রাখা হয় তবে তাদের প্রতি সঠিক শ্রদ্ধা জানানো হবে।

কবি ও লেখক বেলাল বেগ তাঁর বক্তব্যে বলেন, সিরু বাঙ্গালি “বাঙ্গাল কেন যুদ্ধে গেল” বইতে তাঁর কথাগুলো এমনভাবে বর্ণনা করেছেন যা পড়লে মনে হবে সামনে থেকেই যেন যুদ্ধের দিনগুলো দেখছি। তিনি এমনভাবে ঘটনাগুলো বর্ণনা করেছেন যা পাঠকের মনে দাগ কাটবে। তিনি বলেন, বাঙ্গালীরা শান্তি প্রিয়। তারা প্রেমিক জাতি। আমাদের বৃটিশরা শাষণ-শোষণ করেছে। আমাদের রক্তে বাংলা ভাষা মিশে আছে। সমাজের কুচক্র থেকে শেখের বেটির কারণে আমাদের চৈতন্য ফিরে আসতে শুরু করেছে। সাহসিকতার জন্য কৃতজ্ঞতা নাই।

সিরু বাঙ্গলি বলেন, এই বইয়ের প্রতিটি কথাই সত্য। কোন কল্পনা বা মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হয়নি। তিনি সত্য প্রকাশে কখনো পিছপা হন নি। ভবিষ্যতেও হবেন না। যুদ্ধাপরাধের বিচারের সময় সাক্ষি দিতেও তিনি পিছপা হননি। কোন রকম হুমকী বা প্রলোভনে পা রাখেন নি। বইটি পড়লে পাঠকরা সঠিক ইতিহাস জানতে পারবেন বলে তিনি মনে করেন। অনুষ্ঠানে আগত সকলকে তিনি ধন্যবাদ জানান।

অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দর্শক, শ্রোতা, কবি, লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
আলোকিত মানুষদের মধ্যে বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ফকির এখলাসুর রহমান, প্রফেসর হোসনে আরা বেগম, মুক্তধারা নিউইয়র্কের কর্ণধার বিশ্বজিত সাহা, লেখক, গবেষক আহমেদ মাযহার, লেখক, কবি ফকির ইলিয়াস, সিনিয়র সাংবাদিক হাকিকুল ইসলাম খোকন, ছড়াকার শামস্ চৌধুরী রুশো, কবি মিশুক সেলিম, কবি ফারহানা ইলিয়াস তুলি, কবি জুলি রহমান, কবি রিমি রুম্মান, কবি উইলী মুক্তি, কবি মাকসুদা আহম্মেদ,কবি মামুন জামিল, কবি নাসরিন চৌধুরী, কবি কাজী আতিক, লেখক কামাল হোসেন মিঠু, কবি পলি শাহীনা, সালেহীন সাজু, বেনজীর শিকদার, রাহাত কাজী, প্রজন্ম’৭১ নিউইয়র্কের সাদেক শিবলী, সারোয়ার খানসহ বিভিন্ন পত্রিকার এবং টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

জমজমাট এই অনুষ্ঠানের সভাপতি, ইউএস বাংলা নিউজ এর সম্পাদক, কলামিস্ট আবু সাঈদ রতন সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন।