কেমন ছিল গুহার জীবন; জানাল থাই কিশোররা
১ min read
দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে থাইল্যান্ডের থাম লুয়াং গুহার ভেতরে আটকে থাকা ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে ১৮ জুলাই, বুধবার হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গত ৮, ৯ ও ১০ জুলাই শ্বারুদ্ধকর এক অভিযানের মাধ্যমে গুহা থেকে বের করে আনার পর থেকে তারা চিয়াং রাই প্রাচানুকরোহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসা শেষে বাসায় ফেরার আগে এই প্রথমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন ওই ১২ খুদে ফুটবলার ও তাদের কোচ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চিয়াং রাই হাসপাতালের চিকিৎসকরাও। গুহার ভেতরে থাকা সেই ১৭ দিনের কথা এদিন অকপটে শোনালেন তারা। এ সময় তাদের বেশ হাসিখুশি দেখাচ্ছিল। তারা সবাই পাশাপাশি বসেছিল। পরিবারের লোকজন থাম লুয়াং গুহায় বেড়াতে যাওয়ার কথা জানতেন কি না এমন প্রশ্নে অনেকেই এ সময় ইতস্তত বোধ করেন। কিন্তু এদিন সত্যি কথা বলেন কিশোররা। তারা জানান, তাদের মধ্যে অধিকাংশই মিথ্যা কথা বলে গুহায় বেড়াতে যান। এক কিশোর সবার সামনে বলেন, ‘সেদিন ভুল গুহার নাম বলেছিলাম বাবা-মাকে।’
১২ কিশোরের সবাই সাঁতার জানতো বলে সাংবাদিকদের এদিন জানায় ওই কিশোররা। তারা আরও জানায়, খেলা শেষে প্রায়ই তারা সাঁতার কাটত। কীভাবে তারা হারিয়ে গিয়েছিল এমন প্রশ্নে দলের সহকারী কোচ একাপল চান্থাওং বলেন, ‘২৩ তারিখ অনুশীলন শেষে ছেলেরা থাম লুয়াং গুহার ভেতরে বেড়াতে যেতে একমত হয়। এ সময় আমাদের আশপাশের এলাকাও ঘুরার কথা ছিল। আমরা এক ঘণ্টার একটি প্ল্যান করি।’

কোচ বলেন, ‘বিভিন্ন সংবাদে আগে বলা হয়েছিল যে ছেলেরা জন্মদিন উদযাপন করতে গিয়েছিল তেমনটা নয়। আমরা স্বাভাবিকভাবেই হাঁটছিলাম কিন্তু গুহার ভেতর যাওয়ার পর আমরা বুঝতে পারি আমাদের বের হওয়ার পথ আটকে গেছে।’
কোচ আরও জানায়, ছেলেরা বুঝতে পারে পানির কারণে গুহা থেকে বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। পানি ভোরে নেমে যাবে বলে তারা ধারণা করেন। তখন পর্যন্ত তাদের মধ্যে কোনো ভয় কাজ করছিল না। শুষ্ক জায়গা খুঁজে বালুর ওপরে ঘুমিয়ে পড়ে ছেলেরা।
এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘গুহায় আটকে পড়ার পর তোমাদের ভয় করেনি।’ উত্তরে ওই কিশোরদের কোচ জানান, গুহায় আটকে যাওয়ার পর ভীষণ সাহসের সঙ্গে লড়াই করেছে সবাই। তিনি বলেন, ‘প্রথমদিন গুহায় আটকে যাওয়ার পর বাচ্চাদের বুঝাই কালই পানি নেমে যাবে। আমরা খুব শিগগিরই গুহা থেকে বের হয়ে যেতে পারব।’
কোচ আরও বলেন, ‘উদ্ধারের অপেক্ষায় না থেকে আমরা গর্ত খোঁড়ার চেষ্টা করি। গুহার দেয়ালে গর্ত খুঁড়তে থাকি।’
এ সময় এক কিশোর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি সংজ্ঞা হারাচ্ছিলাম। প্রচণ্ড ক্ষুধা ছিল। কোনো শক্তি ছিল না। আমি খাবারের কথা ভুলে থাকার চেষ্টা করতাম কারণ সেটা আমার ক্ষুধা আরও বাড়াবে।’
কে প্রথমে বের হবে সে সিদ্ধান্ত কীভাবে নেওয়া হয়েছিল এ সম্পর্কে কোচ জানান, উদ্ধারকর্মী এবং থাই নেভি সিলের বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হয়।
২৩ জুন ওই গুহায় ঘুরতে গিয়ে আটকা পড়েন কিশোররা। তারপর তাদের উদ্ধার করতে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ও শ্বাসরুদ্ধকর এক অভিযান চালায় থাইল্যান্ড সরকার। নিখোঁজের ৯ দিনের মাথায় তাদেরকে প্রথম গুহার চার কিলোমিটার ভেতরে খুঁজে পাওয়া যায় এবং ৮ থেকে ১০ জুলাই তিন দফা উদ্ধার অভিযানে তাদেরকে ধাপে ধাপে বের করে আনা হয়। থাই কিশোরদের এ উদ্ধার অভিযান সারা পৃথিবীর মানুষের দৃষ্টি অাকর্ষণ করেছিল।
উদ্ধারের পরও কিশোরদেরকে তুলনামূলক সুস্থই দেখা গেছে। তখনই আশা করা হচ্ছিল তাদেরকে হয়তো বেশি দিন হাসপাতালে কাটাতে হবে না। চিকিৎসকরাও নিশ্চিত করেছিলেন, উদ্ধারকৃত কিশোররা মোটামুটি সুস্থ আছেন। দীর্ঘ সময় গুহার ভেতরে থাকার ফলে তাদের কোনো সংক্রমণ হয়েছে কিনা, তা যাচাই করে দেখেন চিকিৎসকরা।
এদিকে এই উদ্ধার অভিযানের প্রধান কমান্ডার ও চিয়াং রাই প্রদেশের সাবেক গভর্নর নারোংসাক ওসোটানাকোর্ন বলেন, ‘উদ্ধারকৃতরা নায়ক বা খলনায়ক কিছুই নয়। তারা শুধু শিশু এবং একটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল।’
গভর্নর বলেন, ‘এ শিশুদেরকে এখন সারা পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ চেনে। আশা করছি ভবিষ্যতে তারা জনকল্যাণে কাজ করবে।’
থাই স্বাস্থ্য বিভাগের একজন পরিদর্শক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের পর্যবেক্ষণ অনুসারে কিশোরদের অবস্থা এখন ভালো। তাদের মানসিক অবস্থাও ভালো। গুহার ভেতর থাকা অবস্থায়ও তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। অধিকাংশ কিশোর কমবেশি দুই কেজি করে ওজন হারিয়েছে।’
সূত্র: বিবিসি, জিনিউজ