মার্চ ২৯, ২০২৪ ১:১৪ পূর্বাহ্ণ || ইউএসবাংলানিউজ২৪.কম

বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড

১ min read

মূল ম্যাচের নির্ধারিত ১০০ ওভারের খেলায় পিছিয়ে ছিলো না কেউই। আগে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ডের করা ২৪১ রানের জবাবে, নিজেদের ৫০ ওভার শেষে ইংল্যান্ডের সংগ্রহও দাঁড়ায় ঠিক ২৪১ রানই। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টাই হয় ফাইনাল ম্যাচ এবং শিরোপা নির্ধারণের জন্য ম্যাচ নেয়া হয় সুপার ওভারে।

যেখানে মুনসিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন কিউই অলরাউন্ডার জিমি নিশাম। বাঁহাতি কিউই পেসার ট্রেন্ট বোল্টের ওভারে বাটলার ও স্টোকস মিলে করেছিলেন ১৫ রান। পরে ইংল্যান্ডের পক্ষে বল হাতে আসেন জোফরা আর্চার। সে ওভারের ৫ বলেই ১৩ রান করে ফেলেন নিশাম। শেষ বলে ১ রান নিতে সক্ষম হন গাপটিল।

ফলে টাই হয় সুপার ওভারও। কিন্তু মূল ম্যাচে বেশি বাউন্ডারি হাঁকানোয় প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। ম্যাচে আগে ব্যাট করা নিউজিল্যান্ড ১৪টি চার ও ২টি ছক্কায় মোট বাউন্ডারি পায় ১৬টি। অন্যদিকে দ্বিতীয় ইনিংসে ২২টি চারের সঙ্গে ২টি ছয় মারে ইংল্যান্ড। যে কারণে সুপার ওভারের নিয়মানুযায়ী চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড।

নিয়মানুযায়ী মূল ম্যাচে পরে ব্যাটিং করা ইংল্যান্ডকে সুপার ওভারে দেয়া হয় আগে ৬টি বল খেলতে। স্বাগতিকদের পক্ষে আসেন ম্যাচের দুই সফল ব্যাটসম্যান বেন স্টোকস এবং জস বাটলার। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে বল হাতে তুলে নেন ট্রেন্ট বোল্ট।

সুপার ওভারের প্রথম বলে স্ট্রাইক নেন স্টোকস। বোল্টের করা প্রথম বলে তিনি নেন ৩ রান। দ্বিতীয় বলে বাটলারের ব্যাট থেকে আসে ১ রান। তৃতীয় ডেলিভারিতে স্টোকস ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ৪ মারলে রান গিয়ে পৌঁছায় আটে।

চতুর্থ বলে অফসাইডের লো ফুলটস বলে ১ রান নেন স্টোকস। স্ট্রাইক পেয়ে পঞ্চম বলে ২ রান নেন বাটলার এবং শেষ বলে লো ফুলটস ডেলিভারিতে ৪ মেরে দলীয় সংগ্রহকে ১৫তে নিয়ে যান এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। ফলে নিউজিল্যান্ডের সামনে জয়ের জন্য ৬ বলে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৬ রানের। যা তাড়া করতে কিউইদের পক্ষে নামেন মার্টিন গাপটিল ও জিমি নিশাম। অন্যদিকে ইংলিশদের পক্ষে বল হাতে তুলে নেন গতি তারকা জোফরা আর্চার। যিনি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১ ওভারে সর্বোচ্চ খরচ করেছেন ১৫ রান। এবার ইংল্যান্ডের হয়ে শিরোপা জিততে তাকে ডিফেন্ড করতে হতো ১৬ রান।

England

ওভারের প্রথম বলে স্ট্রাইক নেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার জিমি নিশাম। অতিরিক্ত চাপে শুরুর বলটি নিশামের ব্যাট থেকে অনেক দূরে করে বসেন আর্চার। আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা দুই হাত প্রসারিত করে জানিয়ে দেন এট ই ওয়াইড বল। ফলে ৬ বলে ১৫ রানে নেমে আসে সমীকরণ।

পরের বলটিই ইয়র্কার করেন আর্চার। তবু সে বল থেকে ২ রান নিতে সক্ষম হন নিশাম। ৫ বলে বাকি থাকে ১৩ রান। দ্বিতীয় বলেই বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে বসেন নিশাম। ২ বলে ৯ রান করে ফেলায় শেষের ৪ বলে কিউইদের বাকি থাকে ৭ রান।

ছন্দে থাকা নিশাম তৃতীয় বলে নেন আরও ২ রান। সমীকরণ নেমে আসে ৩ বলে ৫ রানে। চাপের মুখে চতুর্থ বলটি করেন স্লোয়ার। যে বলে আবার ২ রান নেন নিশাম। কিন্তু শেষ ২ বল থেকে নিশাম ও গাপটিল মিলে ২ রানের বেশি করতে পারেননি। ফলে সুপার ওভারও টাই হয় এবং শিরোপা উঠে যায় ইংল্যান্ডের ট্রফি কেসে।

‘ভিনদেশি’ মরগ্যান পারলেন

স্বদেশি কিংবদন্তিরা পারেননি, পারলেন ‘ভিনদেশি’ ইয়ন মরগ্যান। তিন তিনবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেও স্বদেশি অধিনায়কদের নেতৃত্বে আক্ষেপ নিয়ে ফিরতে হয়েছে ইংল্যান্ড। ‘আইরিশ’ মরগ্যানের হাত ধরেই ঘুচলো আজন্ম সে আক্ষেপ, এক ভিনদেশিই এনে দিলেন বহুল আরাধ্য বিশ্বকাপ ট্রফিটি।

ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা অধিনায়ক মনে করা হয় মাইক ব্রেয়ারলিকে। তার অধীনে ১৯৭৯ সালে ফাইনালে উঠেছিল ইংলিশরা। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে পাত্তাই পায়নি (হারে ৯২ রানে)। ১৯৮৭ সালে পারেননি মাইক গেটিংও। শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে মাত্র ৭ রানে হেরে যায় ইংলিশরা।

একই পরিণতি ১৯৯২ সালে। এবার অধিনায়ক ছিলেন ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান গ্রাহাম গুচ। সেবার ইমরান খানের নেতৃত্বে অসাধ্য সাধন করে পাকিস্তান। ২২ রানে হেরে স্বপ্ন ভাঙে ইংলিশদের।

এরপর তো ২৭টি বছর বিশ্বকাপের ফাইনালেই উঠতে পারেনি ইংল্যান্ড। এবার সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে ফাইনালে নাম লেখায় ক্রিকেটের জনকরা, মরগ্যানের নেতৃত্বে। আর তার হাত ধরেই ঘুরে যায় ইংলিশদের ভাগ্য, প্রথমবারের মতো শিরোপা উল্লাসে মাতে থ্রি লায়ন্সরা।

মরগ্যানের জন্ম আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে। ১৯৮৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। বাবা জডি মরগ্যান আর মা ওলিভিয়া মরগ্যানের দম্পতির সকল ছেলেপুলেই খেলতেন ক্রিকেট। পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রেখে, এউইন মরগ্যানও হলেন সে পথের যাত্রী। ৩ ভাই আর ২ বোনের সবাই খেলেছেন আয়ারল্যান্ডের জাতীয় দলে, মরগ্যানও তাই।

তবে তিনি শুধু খেলেননি! নিজের জীবন বোধকে মিশিয়েছেন তাতে। একগুঁয়েমি, জেদ আর রাগ সব ঢেলেছেন ক্রিকেটে। সফলতাও পেয়েছেন। নিজের স্বপ্ন পূরণ করেছেন। কিন্তু একটা স্বপ্ন তো মনের মধ্যে ছিলই, আইরিশরা যে তখনও টেস্ট খেলে না।

আয়ারল্যান্ডের সবুজ জার্সি ছেড়ে তাই ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান মরগ্যান। এখানে শুরুটা অবশ্য ভালো ছিল না। সে কারণে শুনতে হয় বহু কটুক্তি-সমালোচনা। ২০১৫ সালে তার নেতৃত্বে ইংলিশরা প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়ার পর সেই সমালোচনা আরও ডালপালা গজাতে থাকে।

জাতীয়তাবোধ নেই, ইংরেজদের জাতীয় সঙ্গীতের ‘গড সেভ দ্য দি কুইনে’ মরগ্যান গলা মেলান না বলেও অপবাদ আছে। তবে এত কিছুর পরও হাল ছাড়েননি। গত বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর তার নেতৃত্বগুণেই এক নাম্বার দল হয়ে উঠে ইংলিশরা।

নানা ঘটন-অঘটন পাশ কাটিয়ে ২৭ বছর পর এবারই নাম লেখায় ফাইনালে। পরের গল্পটা তো সবারই জানা। স্বদেশি কিংবদন্তিরা যা পারেননি, ভিনদেশি মরগ্যানই তা এনে দিলেন ইংল্যান্ডকে। এরপর নিশ্চয়ই তার জাতীয়তা নিয়ে আর প্রশ্ন উঠবে না। ইংলিশদের ইতিহাসের পাতায় যে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে গেল মরগ্যানের নামটি, যার পাশে ‘ভিনদেশি’ শব্দটা বড্ড বেমানান।

Comments

comments

More Stories

১ min read
১ min read
১ min read
error: Content is protected !!