এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ৭:০৮ অপরাহ্ণ || ইউএসবাংলানিউজ২৪.কম

পাকিস্তানকে কাঁদিয়ে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

১ min read

উড়তে থাকা পাকিস্তান ক্রিকেটের রূপকথাও এবার ফুরাল! এই বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে ১০ উইকেটে হারিয়ে শুরু। এরপর প্রতিটা ম্যাচেই ছিল এগিয়ে চলার গল্প। বৃহস্পতিবার সেমিফাইনালে অপ্রতিরোধ্য বাবর আজমের দলকে থামিয়ে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আরেকটি জয়ের গল্প লিখে ২০০৯ সালের পর ফের ফাইনালে যাওয়া হলো না পাকিস্তানের। শেষটাতে এসে মার্কাস স্টয়নিস আর ম্যাথু ওয়েডের বীরত্বে ফাইনালে অজিরা। সেটাও কি না এক ওভার আগেই পাওয়া জয়ে।

দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামটা তো তাদের হোম গ্রাউন্ডই। গ্যালারি ভর্তি হাজারো দর্শক। তাদের উচ্ছ্বাসের স্রোত লাহোর-করাচি পর্যন্ত ছড়িয়ে দিয়েছিলেন রিজওয়ান-শাহীন শাহ আফ্রিদিরা। কিন্তু শেষটাতে এসে সব খোয়াতে হলো তাদের। পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া পেয়ে গেল আইসিসি টি-টোয়েন্টি ফাইনালের টিকিট। যেখানে আগে থেকেই অপেক্ষায় নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল। ১৪ নভেম্বর শিরোপার লড়াইয়ে দুবাইয়ের এই মাঠেই মুখোমুখি হবে তাসমান সাগর পাড়ের দুই দেশ।

বৃহস্পতিবার মনে হচ্ছিল সহজেই জিতবে পাকিস্তান। কিন্তু সমীকরণ মেলাতে পারেনি তারা। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান প্রথমে তুলে ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে করে ১৭৬ রান। জবাবে নেমে অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপ ৫ উইকেট হারিয়ে শেষ ওভারের আগেই মেতে উঠে জয়ের আনন্দে!

অথচ অজিদের গোড়ায় গলদ নিয়ে কথা হচ্ছিল! অস্ট্রেলিয়া টস জিতে দুবাই ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সেমিফাইনালের মতো ম্যাচে কি-না অ্যারন ফিঞ্চ প্রথমে ব্যাট করতে পাঠালেন পাকিস্তানকে। তারপরও শুরুতেই জীবন পান মোহাম্মদ রিজওয়ান। এই দুই ভুলের মাশুল গুণতে হচ্ছিল তাদের। কিন্তু শেষের চমকে স্বস্তি অজিদের। দল ফাইনালে।

অবশ্য কিছুটা দেখে-শুনে খেললে ম্যাচে আরও আগেই জিততে পারত অস্ট্রেলিয়া। দলীয় ১ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর ডেভিড ওয়ার্নার-মিশেল মার্শ মিলে লড়েছিলেন। ১০ ওভারে পাকিস্তান ৭১ আর অস্ট্রেলিয়া ছিল ৩ উইকেটে ৮৯। কিন্তু সেই জায়গা থেকে পা পিছলে যায় অজিদের। শাদাব খানের স্পিনেই রাতের আলোয় সর্বনাশ। প্রথমে তিনি ফেরান স্টিভেন স্মিথকে (৫)। এরপর তুলে নেন পাকিস্তানের গলার কাঁটা হয়ে উঠা ডেভিড ওয়ার্নারকে। ঝড় তুলতে থাকা এই ব্যাটসম্যানকে ফেরাতেই ম্যাচটা মুঠোয় চলে যায় পাকিস্তানের। ওয়ার্নার ফেরেন ৩০ বলে ৪৯ রানে।

এরপর গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকেও ভয়ঙ্কর হতে দিলেন না। অবশ্য এই অজি ব্যাটসম্যানের সময়টাও ভালো যাচ্ছে না। ৭ রান তুলতেই শাদাবের স্পিনে বোকা বন গেলেন। তারপরের সময়টুকু ছিল শুধু পাকিস্তানি সমর্থকদের জয়ের প্রতীক্ষা! কিন্তু তখনই হিসাবের ছক উল্টে দেন স্টয়নিস ও ওয়েড। অভিজ্ঞতা একেই বলে। দুবাইয়ের উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে খেলেন দারুণ ইনিংস। তাদের জুটিতেই প্রায় হারতে হারতে জিতে গেল অজিরা। দুজন দলকে জিতিয়ে গড়েন ৬.৪ ওভারে ৮১ রানের জুটি। স্টয়নিস ৩১ বলে ৪০ আর ওয়েড ১৭ বলে অপরাজিত ৪১।

এদিকে আগের দিনই খবর ছিল- জ্বরে আক্রান্ত মোহাম্মদ রিজওয়ান। করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ হলেও খেলবেন কি-না তা নিয়ে তো শঙ্কা ছিলই। ফিটনেস সার্টিফিকেট পেয়ে তিনি খেললেন। আর বুঝিয়ে দিলেন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মটাতেই আছেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে এই ওপেনারের আগের পাঁচটি ইনিংস দেখুন- ভারতের বিপক্ষে অপরাজিত ৭৯, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৩; পরের তিন ম্যাচে যথাক্রমে ৮, ৭৯ ও ১৫। এবার সেমিফাইনালের মহা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তার ব্যাটে ৬৭ রান।

বৃহস্পতিবার দুবাইয়ে সতীর্থ বাবর আজমকে দিনে দারুণ এক জুটি গড়েন রিজওয়ান। টস হেরে ব্যাটিং পাওয়া যে মন্দ হয়নি তারও প্রমাণ দেন দুজন। অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণে সমীহ করে খেলে গেছেন তিনি। পাকিস্তান প্রথম ৩ ওভারে তুলে ২১। পাওয়ার প্লের পরের ৩ ওভারে ২৬। বাবর-রিজওয়ানের জুটি এসে থামে ৭১ রানে। দেখে-শুনে খেলতে থাকা বাবর ফেরেন অ্যাডাম জাম্পার স্পিনে। লং অন দিয়ে মারতে গিয়ে পাকিস্তান অধিনায়ক ক্যাচ তুলে দেন ডেভিড ওয়ার্নারের হাতে। ৩৪ বলে ৩৯ বাবরের ব্যাটে।

এরপর রিজওয়ান খেলতে থাকেন তার সেই চেনা স্টাইলে। ৪১ বলে এই ডানহাতি তুলে নেন ফিফটি। এটি চলতি বিশ্বকাপে তৃতীয় অর্ধশতক। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ২৭তম। অবশ্য এরপর আর বেশি দূর যেতে পারেননি এই ইনফর্ম ব্যাটসম্যান। ৫২ বলে ৬৭ করা রিজওয়ানকে থামান মিচেল স্টার্ক। তার আগে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এক পঞ্জিকাবর্ষে এক হাজার রান করার রেকর্ড গড়লেন এই পাকিস্তানি ওপেনার। শূন্য রানে জীবন পেয়ে ঠিকঠাক কাজে লাগালেন।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এক পঞ্জিকাবর্ষে এর আগে সর্বোচ্চ রান ছিল পল স্টার্লিংয়ের। এবার নতুন এক উচ্চতায় পা রাখলেন রিজওয়ান।

শেষটাতে এসে পাকিস্তানের স্কোরবোর্ড চাকার গতি বাড়িয়ে দেন ফকর জামান। তাকে যেন থামাতেই পারছিল না অজি বোলাররা। অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের কোনো কৌশলই কাজে আসছিল না। সঙ্গে এটাও ফিসফাস হচ্ছিল দুবাইয়ের এই উইকেটে টস জিতে সেমির মতো ম্যাচে অজি অধিনায়ক কেন প্রথমে ব্যাটিং নিলেন না!

পুরো ম্যাচটাতে যা খেলছিল পাকিস্তান, শেষদিকে এসে থমকে যায়। ১৯তম ওভারে মাত্র ৩ রান পায় তারা। প্যাট কামিন্সের বলে থমকে যায় পাকিস্তানের রানের চাকা! সঙ্গে ইনফর্ম আসিফ আলিকেও (০) ফেরান তিনি। পরের ওভারে স্টার্কও ফিরে পান ছন্দ। শোয়েব মালিককে (১) ফেরান কাটারে।

তবে ফখরকে আটকানো যাচ্ছিল না কিছুতেই। শেষটাতে এসেও ঝড় তুলেন তিনি। ৩২ বলে ৫৫ রান তুলে থাকলেন অপরাজিত। ইনিংসে ছিল চারটি ছক্কা ও তিনটি চার! স্টার্ক ৪ ওভারে ৩৮ রানে ২ উইকেট। শেষ দুটি ছক্কা হজম করতে হয় এই অজি পেসারকে। এটাও বড় হয়ে উঠতে যাচ্ছিল। কিন্তু আনপ্রেডিক্টেবল থেকে পাকিস্তানকে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে দেয়নি অস্ট্রেলিয়া। বাবর আজমের স্বপ্ন মাড়িয়ে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফির সুবাস পাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। উড়ন্ত টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের বিদায়টা হলো কান্নায়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর- পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৭৬/৫ (রিজওয়ান ৬৭, বাবর ৩৯, ফখর ৫৫*, আসিফ ০, মালিক ১, হাফিজ ১; স্টার্ক ২/৩৮, কামিন্স ১/২০, জ্যাম্পা ১/২২) অস্ট্রেলিয়া: ১৯ ওভারে ১৭৭/৫ (ওয়ার্নার ৪৯, ফিঞ্চ ০, মার্শ ২৮, স্মিথ ৫, ম্যাক্সওয়েল ৭, স্টয়নিস ৪০*, ওয়েড ৪১*; আফ্রিদি ১/৩৫, শাদাব ৪/২৬) ফল: অস্ট্রেলিয়া ৫ উইকেটে জয়ী ম্যাচসেরা: ম্যাথু ওয়েড।

Comments

comments

More Stories

১ min read
১ min read
১ min read

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!