এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ || ইউএসবাংলানিউজ২৪.কম

কলম্বাস (২য় পর্ব)

১ min read

ক্রিস্টোফার কলাম্বাস মানুষটি ছিলেন কবি স্বভাবের, সামান্য কারনে হো হো করে হাসতেন, আবার বিনা কারনে ভীষন রেগে যেতেন তবে তার প্রতি কেউ সামান্য ভালবাসা দেখালে তিনি মুগ্ধ হয়ে যেতেন এবং কৃতজ্ঞ থাকতেন সারা জীবন, সেই ব্যাক্তির জন্য বুকের সব জানালা খুলে দিতেন আবার কেউ একটু অপমান করলে মুষড়ে পড়তেন,ভোগ করতেন মৃত্যুযন্তাণা।

দ্বিতীয়বার ঐ বছরেই আবার এক বিরাট বহর নিয়ে (দেড় হাজার লোক) কলম্বাস অভিযানে নেমে পড়লেন।প্রথম অভিযানে যে ৩৯ জন লোক হিসপানিওয়ালায় দ্বীপে থেকে গিয়েছিলো এবং ভাঙা জাহাজের কাঠ দিয়ে তাদের থাকার জন্য কুঠি বানিয়েছিলেন এবার এসে দেখলেন কুঠিও নেই লোকজনও নেই সব যেনো ভোজবাজির মতো উধাও হয়ে গেছে। কিছুদিন অবস্হান করে আবার শক্ত কুঠি বানিয়ে নিজের ভাই কে তার ভার দিলেন।উল্লেখ্য ইউরোপের বাইরে সেটিই প্রথম ইউরোপের উপনিবেশ।

এবারের সফরে আবিস্কার করলেন জ্যামাইকা।হঠাৎ তার ভাই প্রানের ভয়ে পালিয়ে কলাম্বাসের কাছে জানালেন, আমাদের মধ্যে অনেকের আচরণে ও দূর্ব্যবহারে আধিবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে আবার কুঠি ভেঙে গুডিয়ে দিয়েছে।সব শুনে কলাম্বাস শান্তভাবে মিলেমিশে থাকার পরামর্শ দিয়ে স্পেন পানে জাহাজের গতিপথ নির্ধারন করলেন।

রানী কে এই সফরে ও প্রচুর সোনা-দানা উপহার দিলেন।কিন্তু অন্য নাবিকেরা ভীষন অখুশী হলো কারন যারা কলাম্বাসের সাথী হয়েছিলো তারা কিন্তু ঐ দ্বীপে আনন্দের জন্য যায়নি , গিয়েছিলো সোনা আহরন করে ধনী হতে।সে জন্য অভিযাত্তি নাবিকেরা তাদের নেতা কলাম্বাসের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে কুৎসা রটনা করতে লাগলো , অন্যদিকে পাদরীরাও রেগে গেলো কারন , তারা সেখানে ধর্ম প্রচার করতে পারছে না বলে অভিযোগ করছিলো রাজাদরবারে ,কলাম্বাস এই যুক্তি খন্ডন করে বোঝালেন ,নতুন আবিস্কৃিত দেশগুলিতে আগে শৃঙ্খলা ও শান্তি আনা দরকার।তার আগে ধর্ম প্রচার করতে যাওয়া সঠিক হবে না।

১৪৯৮ সালের ৩০ মে কলাম্বাস তৃতীয়বার অভিযানে বের হলেন।এবার নতুন দেশে নাবিক হিসাবে সাথে নিয়ে গেলেন রাজার অনুমতি নিয়ে জেলখানার কয়েদী গুন্ডা খুনী চোরদের, এতে কলম্বাসের বিপক্ষের লোকেরা খুব খুশী হলো কারন নতুন জায়গায় গিয়ে তারা অরাজকতা শুরু করলো যার ফলে আদিবাসী আর কয়েদীদের মধ্যে গোল বাধালো।

বাধ্য হয়ে শান্ত পরিবেশ আনার জন্য কয়েদী ও আধিবাসী যারা লুটপাট এবং হত্যা করছিল তাদের দমন করলেন শক্ত হাতে, আর তখন থেকেই দাস প্রথার পত্তন শুরু হলো এখানে ।

এ সফরে কলম্বাস তিরিনিদাদ আবিস্কার করলেন।তার আবিস্কৃত দেশে ভাল ভাবেই পরিচালনা করছিলেন। কিন্তু পরাজিত কয়েদীরা দেশে ফিরে নানান কথা বলে রাজারানী ও দেশবাসীকে ক্ষেপিয়ে তুল্লো।রাজার কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো কারন দিন দিন কলম্বাসের সম্মান এবং প্রতিপত্তি বেড়েই চলছিল।চুক্তি অনুযায়ী নতুন দেশের শাসনকর্তা বা ভাইসরয় কলম্বাস হচ্ছিল , আর একজন ভিনদেশী মানুষ এত ক্ষমতা এটা রাজাসহ অনেকের সহ্য হলো না, তাই চল্লো ষড়যন্ত্র ।তবে বরাবরের মতই রানী ইসেবেলার আশীর্বাদ ছিলো কলম্বাসের উপর।একদিন রানী প্রাসাদ থেকে বের হয়েছেন পথে দেখলেন এক ওয়েস্ট ইন্ডিজ গর্ভবতী রমনী রাস্তায় বিশ্রীভাবে শুয়ে আছে।তিনি তার চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, একি আমার নতুন দেশের মেয়েদের একি অবস্তা ?রানী কে ষঢযন্তকারীরা তার কানে বিষ ঢালতে দেরী করলো না,জানানো হলো, কলম্বাসের শাসনে ওখানে ব্যাভিচার, লাম্পট্য,বিশৃঙ্খলা চরম পর্যায়ে যে ,সব মেয়েদের এই হাল।সেই দিনেই রানী সোজা প্রাসাদে ঢুকে কলম্বাসের বিরুদ্ধে তদন্ত বসাতে সম্মত হলেন।

ইতিমধ্যেই কলম্বাস কাছাকাছি এক বিরাট ভূ-খন্ডের সন্ধান পেলেন ভাবলেন এটি হবে হয়তো এশিয়ার অংশ।কিছুকাল পরে আরাক অভিযাত্তী আমেরিগো ভেসপুচি আবিস্কার করলেন নতুন মহাদেশ যার নাম তার নামানুসারে রাখা হলো আমেরিকা।মজার কথা হলো সেখানকার আদি অধিবাসীদের নাম কিন্তু রয়ে গেলো এখন অবধি ‘’রেড ইন্ডিয়ান’’। (চলবে)

-ফাহীম রেজা নূর

Comments

comments

More Stories

১ min read
১ min read
১ min read

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!