এপ্রিল ২০, ২০২৪ ৪:১৩ পূর্বাহ্ণ || ইউএসবাংলানিউজ২৪.কম

এটিএম শামসুজ্জামানের শেষ ইচ্ছে পূরণ করলো পরিবার

১ min read

দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। কয়েক দফায় সুস্থ হয়েও উঠেছিলেন। কিন্তু এবার আর স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলা গেলো না। আজ সকালে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। এই কিংবদন্তির বিদায়ে শোকে মুহ্যমান হয়ে উঠেছে শোবিজ অঙ্গন।

একুশে পদকপ্রাপ্ত এটিএম শামসুজ্জামানের মত দীর্ঘ ও গভীর অভিনয় জীবন এই দেশের আর কোনও অভিনেতা পেয়েছেন বলে জানা নেই। অভিনয়ের প্রতিটি শাখায় ছিল তার অবাদ বিচরণ। একাধারে তিনি অভিনেতা, পরিচালক, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ রচয়িতা ও গল্পকার হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন ইন্ডাস্ট্রির সর্বজন শ্রদ্ধেয়।

শুরুটা মঞ্চে হলেও কয়েক দশকের ক্যারিয়ারে এটিএম শামসুজ্জামান দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। এরপর খান আতাউর রহমান, কাজী জহির, সুভাষ দত্তের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। চলচ্চিত্রজীবন শুরু করেন কৌতুক অভিনেতা হিসেবে, ১৯৬৫ সালের দিকে। তবে আলোচনায় আসেন ১৯৭৬ সালে আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্রের মাধ্যমে। খল অভিনেতা হিসেবে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেন।

১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন এটিএম শামসুজ্জামান। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার ভোলাকোটের বড় বাড়ি আর ঢাকায় থাকতেন সূত্রাপুর দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে পৈত্রিক বাড়িতে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার পগোজ স্কুল, ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহীর লোকনাথ হাই স্কুলে। পগোজ স্কুলে তার বন্ধু ছিলেন আরেক অভিনেতা প্রবীর মিত্র। ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট হাই স্কুল থেকে। তারপর জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। অভিনেতার বাবা নূরুজ্জামান ছিলেন নামকরা উকিল এবং শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। মাতা নুরুন্নেসা বেগম। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শামসুজ্জামান ছিলেন সবার বড়।

নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে প্রথম কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন এটিএম শামসুজ্জামান। এ পর্যন্ত শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনি লিখেছেন তিনি। ‘জলছবি’ ছবির মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক।

১৯৮৭ সালে কাজী হায়াত পরিচালিত ‘দায়ী কে’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। রেদওয়ান রনি পরিচালিত ‘চোরাবালি’তে অভিনয় করেন ও শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব-চরিত্রে অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে পেয়েছেন একুশে পদক।

২০০৯ সালে প্রথম পরিচালনা সিনেমা পরিচালনা করেন তিনি। শাবনূর-রিয়াজ জুটিকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘এবাদত’ নামের ছবি।অভিনয়-নির্মাণের পাশাপাশি একজন লেখক হিসেবেও এটিএম শামসুজ্জামান সফল। কাহিনিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। এই অভিনেতা নাটক-সিনেমার পাণ্ডুলিপির বাইরে গল্প-কবিতাও লেখার চর্চা করেছেন নানাভাবে।

এটিএম শামসুজ্জামানের উল্লেখযোগ্য টিভি ধারাবাহিকের মধ্যে রয়েছে ‘রঙের মানুষ’, ‘ভবের হাট’, ‘ঘর কুটুম’, ‘বউ চুরি’, ‘নোয়াশাল’ প্রভৃতি।

গুণী এই অভিনেতার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বড় বউ’, ‘অবুঝ মন’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘শ্লোগান’, ‘স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা’, ‘সংগ্রাম’, ‘ভুল যখন ভাঙলো’, ‘চোখের জলে’, ‘লাঠিয়াল’, ‘অভাগী’, ‘নয়নমনি’, ‘যাদুর বাঁশি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘অশিক্ষিত’, ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘লাল কাজল’, ‘পুরস্কার’, ‘প্রিন্সেস টিনা খান’, ‘রামের সুমতি’, ‘ঢাকা ৮৬’, ‘দায়ী কে?’, ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, ‘দোলনা’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘অজান্তে’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘তোমার জন্য পাগল’, ‘ম্যাডাম ফুলি’, ‘চুড়িওয়ালা’, ‘শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ’, ‘জামাই শ্বশুর’, ‘আধিয়ার’, ‘শাস্তি’, ‘মোল্লা বাড়ির বউ’, ‘হাজার বছর ধরে’, ‘আমার স্বপ্ন তুমি’, ‘দাদীমা’, ‘আয়না’, ‘ডাক্তার বাড়ী’, ‘চাঁদের মতো বউ’, ‘মন বসেনা পড়ার টেবিলে’, ‘এবাদাত’সহ অসংখ্য ছবি।

Comments

comments

More Stories

১ min read
১ min read
১ min read

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!