না ফেরার দেশে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
১ min readহার মানলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তার মৃত্যুতে বাংলা চলচ্চিত্রের একটা যুগ যেন শেষ হয়ে গেল। করোনাই যেন অনুঘটকের মতো সৌমিত্রকে এগিয়ে নিয়ে গেল সেই না-ফেরার দেশে। তবে অনেকরকম জটিলতাই দেখা গিয়েছিল শরীরে। চিকিৎসকদের সূত্রে জানা যাচ্ছে, মাল্টিঅর্গান ফেলিওর, ব্রেনডেথ হয়ে মৃত্যু হয়েছে সৌমিত্রের! বুধবার বিকেলের পর থেকেই চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যান এই বর্ষীয়ান অভিনেতা।
১৫ নভেম্বর, রোববার সকালে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, মৃত্যু হয়েছে সৌমিত্রের। ৪০ দিন ধরে বেলভিউতে ভর্তি ছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
খুব স্বাভাবিকভাবেই তাই করোনামুক্ত শরীর একটু-একটু করে হারাতে বসেছিল রোগের সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষমতা। ফলে তাকে দীর্ঘদিন লাইফ সাপোর্টে রাখতেও হয়েছিল।
৫ অক্টোবর কোভিড টেস্টের রিপোর্ট আসে সৌমিত্রের। পরের দিন বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় অভিনেতাকে। কোভিড-মুক্ত হন তিনি। শারীরিক অবস্থার খানিক উন্নতির কথাও জানানো হয় হাসপাতালের তরফে।
তবে শেষ পর্যন্ত বাধ সাধল কো-মর্বিডিটি ফ্যাক্টর। একের পর এক অঙ্গ নিষ্ক্রিয় হতে থাকল। কোভিড-এনসেফ্যালোপ্যাথিই এর কারণ বলে জানান চিকিৎসকেরা। একটু একটু করে অবস্থার অবনতি হতে থাকে রোজই। শেষ রক্ষা হল না। আজ সকালেই সৌমিত্রের মৃত্যুর খবর ঘোষণা করল হাসপাতাল।
প্রসঙ্গত, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে ছিলেন প্রযোজক, গল্পকার, কবি, আবৃত্তিকার। মঞ্চেও দুর্দান্ত একজন অভিনেতা ছিলেন। পেশাজীবন শুরু করেছেন ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবে। পরে সিনেমার জন্য ডাক পান ১৯৫৯ সালে, অস্কারজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ সিনেমার জন্য।
সে ছবি দিয়েই অভিনয়জগতে পা রাখেন। এরপর তিনি সত্যজিৎ রায়ের ৩৪টি সিনেমার ১৪টিতে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত চরিত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘ফেলুদা’।
সত্যজিৎ ছাড়াও তিনি মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মতো কালজয়ী নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন।
তার নায়িকা হিসেবে দেখা গেছে সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া দেবী, শর্মিলা ঠাকুর, অপর্ণা সেন, মাধবী মুখার্জি, তনুজাসহ অনেক কিংবদন্তি অভিনেত্রীকে।
ভারত সরকার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ২০০৪ সালে ‘পদ্মভূষণ’ ও ২০১২ সালে ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’ দিয়ে সম্মানিত করেছে। এছাড়াও ২০১৭ সালে তিনি ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ‘লিজিওন অব অনার’ লাভ করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার একই বছরে তাকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ পুরস্কার প্রদান করে। তবে ২০১৩ সালে এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।