এপ্রিল ২৫, ২০২৪ ৫:২৮ অপরাহ্ণ || ইউএসবাংলানিউজ২৪.কম

প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ছে, বড় বন্যার আশঙ্কা বাংলাদেশে

১ min read

অব্যাহত বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ছে। পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। চলতি সপ্তাহজুড়ে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে, একই সঙ্গে বন্যা মধ্যাঞ্চলেও (ঢাকার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল) ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের শনিবারের তথ্য অনুযায়ী, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, ধলাই, খোয়াই, সোমেশ্বরী, কংস, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, ধরলা, তিস্তা, ঘাঘট, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদীর পানি ২৩টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

একদিন আগে শুক্রবার সাতটি নদীর পানি ১২টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সাঙ্গু নদীর পানি বান্দরবানে ১২১ সেন্টিমিটার ও দোহাজারীতে বিপৎসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আগামী ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলেও জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র। নতুন করে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর অঞ্চলে বন্যা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলেও জানান আরিফুজ্জামান।

আগামী ৭২ ঘণ্টায় সকল প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদী সারিয়াকান্দি এবং কাজিপুর পয়েন্ট বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে আরও বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, সিলেট ও রংপুর বিভাগের সুরমা, কুশিয়ারা, কংস, সোমেশ্বরী, ফেনী, হালদা, মাতামুহুরী, সাঙ্গু, ধরলাসহ প্রধান নদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়তে পারে।

এদিকে, আবহাওয়া অফিস আগামী পাঁচদিনের পূর্বাভাসে ‘আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই’ বলে জানিয়েছে। তারা জানায়, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ৬ জুলাই থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আজ শনিবারও (১৩ জুলাই) দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে হালকা, মাঝারি, ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা ৭টা-পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রাও সামান্য বাড়তে পারে।

৪৮ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে। তবে আগামী পাঁচদিন আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

flood1

শনিবার সন্ধ্যার পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় এবং খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে।

অন্যদিকে শনিবার সকালে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, দেশে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে আজ (১৩ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট এবং চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বৃষ্টিপাত হতে পারে। অতি ভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা-পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে সীতাকুণ্ডে ২২০ মিলিমিটার। এ সময়ে ঢাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৩ মিলিমিটার।

শনিবার ঢাকায় ২২.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত

শনিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার আগে ৬ ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২২ দশমিক ৬ মিলিমিটার (১১ থেকে ২২ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতকে বলা হয় মাঝারি)। ফলে নগরীর বিভিন্ন অঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যা ৭টা পরবর্তী ৬ ঘণ্টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শনিবার হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সঙ্গে আংশিক মেঘলা থেকে অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকতে পারে রাজধানীর রাতের আকাশ।

flood2

বৃষ্টিপাতের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকা মহানগরীতে শুক্রবার (১৩ জুলাই) ভোর ৬টা থেকে শনিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ৮১ মিলিমিটার, বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ৩৩ মিলিমিটার এবং বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ১ মিলিমিটার। যদিও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৫০ মিলিমিটারের ওপরে বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেই তুলনায় ঢাকায় কম বৃষ্টিপাত হলেও এখানে জলাবদ্ধতার ভোগান্তি তুলনামূলক অনেক বেশি।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, শনিবার সন্ধ্যা ৭টা পরবর্তী ৬ ঘণ্টায় ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় দক্ষিণ/দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার থাকতে পারে। যা অস্থায়ীভাবে ২৫ থেকে ৩৫ কিলোমিটার বেগেও বইতে পারে। সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯৮ শতাংশ। রোববার ঢাকায় ভোর ৫টা ৪৯ মিনিটে সূর্যোদয় এবং সন্ধ্যা ৬টা ৪৯ মিনিটে সূর্যাস্ত যাবে।

কুড়িগ্রামে নদী ভাঙনে নিঃস্ব ৭২৫ পরিবার

কুড়িগ্রামে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও দুধকুমোর নদীর পানি শনিবার দুপুরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে এ চারটি নদীর অববাহিকার চর-দ্বীপচর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় সরকারি হিসেবে কমপক্ষে ২৮ হাজার ১৮২ পরিবারের দেড় লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

flood2

বন্যার পাশাপাশি নদী ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে ৭২৫টি পরিবার। এছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, কাঁচা-পাকা রাস্তা, ব্রিজ ও কালভাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যা পরিস্তিতি মোকাবেলায় সকল বিভাগকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বাতিল করা হয়েছে ছুটি। খোলা হয়েছে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, কুড়িগ্রামের ছোট-বড় ১৬টি নদ-নদীর মধ্যে ধরলা ৫২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র ৩৯ সেন্টিমিটার, তিস্তা ৯ সেন্টিমিটার ও দুধকুমোর নদীর পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে শনিবার দুপুর থেকে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে সারডোবে ধরলা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। চিলমারীর নয়ারহাট ও অষ্টমীরচর ইউনিয়নের কয়েকটি চরে নদী ভাঙনে ৫০টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে।

বিপৎসীমার ৩ সে.মি. ওপরে বগুড়ার যমুনার পানি

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতের ফলে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে উপজেলার চর এলাকার কামারপুর, রহদহ, ঘুঘুদহ, চন্দনবাইশা, ধলিরকান্দি ও কুতুবপুরের নিচু এলাকা ডুবে গেছে। পানির নিচে তলিয়ে গেছে আউশ ধান, আমন বীজতলা ও শাক-সবজির খেত।

flood2

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান মাহমুদ জানান, যমুনার পানি সারিয়াকান্দি ও ধুনট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদী সারিয়াকান্দির গোদখালী ও ধুনটের কয়াগাড়ী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হলেও বাঁধে ভাঙনের কোনো সম্ভাবনা নেই। যমুনার পানি নদী পাড়ের ওপড় দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় যমুনার ভাঙনও কমে গেছে।

চট্টগ্রামে পঞ্চমবারের মতো জলাবদ্ধতা

৫ জুলাই বৃষ্টি শুরুর পর থেকে গত আট দিনে পঞ্চমবারের মতো জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর বেশিরভাগ এলাকায়। শনিবার (১৩ জুলাই) ভোর থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা হাঁটু থেকে কোমরসমান পানিতে তলিয়ে গেছে। এ কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও কর্মস্থলমুখী মানুষকে। পানি ঢুকছে নগরীর নিচু এলাকার বাসাবাড়ি, অফিস ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। জলাবদ্ধতার কারণে পুরো নগরীতে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, পাঁচদিনে চট্টগ্রাম নগরীতে মোট ৬১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত সোমবার (৮ জুলাই) নগরীতে সর্বোচ্চ ২৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। এছাড়া রোববার ৬৬ মিলিমিটার, মঙ্গলবার ৬৯ মিলিমিটার, বুধবার ১৪৬ মিলিমিটার ও বৃহস্পতিবার ৯৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।

বিপৎসীমার ৪৫ সে.মি. ওপরে খোয়াই-কুশিয়ারার পানি

হবিগঞ্জে খোয়াই নদী এবং কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎকণ্ঠায় আছে সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম বলেন, টানা বর্ষণের ফলে কুশিয়ারা নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়। শনিবার বিকেল ৪টায় নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। নদীর বাঁধের অংশ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে বালুর বস্তা ফেলে বাঁধরক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করলে বিবিয়ানা পাওয়ার প্ল্যান্ট আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নদীতে পানি ক্রমেই বাড়ছে।

flood2

বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপরে সুরমার পানি

সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। শনিবার দুপুর পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সেই সঙ্গে সকাল থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানির বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৮৫ মিলিমিটার।

দোয়ানি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৫ সে.মি. ওপরে তিস্তার পানি

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ও বড়খাতা শহরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র পাকা সড়কটি পানির তোড়ে ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শনিবার দুপুরে তিস্তার পানিতে সড়কটি ভেঙে যায়। এতে হাতীবান্ধা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শনিবার দুপুরে তিস্তার পানি প্রবাহ দোয়ানি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা ৫৩.০৫ সেন্টিমিটার।

মনু নদের পানি বিপৎসীমার ৩৭ সে.মি. ওপরে

মৌলভীবাজারের মনু, কুশিয়ারা ও ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরই মধ্যে ধলাইয়ের একটি ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে কমলগঞ্জ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। মনু নদের পানি বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার, ধলাই নদীর ৩০ সেন্টিমিটার ও কুশিয়ারা নদীর পানি ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে শুক্রবার (১২ জুলাই) মধ্যরাত থেকে মনু নদ, কুশিয়ারা ও জেলার কমলগঞ্জের ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। তবে দুপুর ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ধলাইয়ের পানি ২ সেন্টিমিটার কমেছে। কিন্তু ক্রমাগত বাড়ছে মনুর পানি।

নেত্রকোনার ২৫ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

টানা চারদিনের ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোণার তিন উপজেলা কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টায় ২৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে কলমাকান্দা ও বারহাট্টা উপজেলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় তিন উপজেলায় অন্তত আড়াই শতাধিক গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। গ্রামীন বেশ কয়েকটি সড়ক পানির নিচে থাকায় উপজেলা ও জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শনিবার নেত্রকোণার জারিয়া পয়েন্টের কংস নদের পানির গজ রিডার আলমগীর হোসেন জানান, সকাল ৯টার দিকে কংস নদের পানি বিপৎসীমার ১৫১ সেন্টিমিটার ও কলমাকান্দার উব্দা খালি নদীর পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

flood

জামালপুরে পানিবন্দি ৫ হাজার মানুষ

যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জামালপুরে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫ হাজার মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সহকারি প্রকৌশলী সোহেল রানা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনায় পানি বেড়ে আজ (শনিবার) সকালে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গাইবান্ধায় বেড়েছে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি

গাইবান্ধায় আরও বেড়েছে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। শনিবার সকাল ৯টায় নদের ফুলছড়ি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন। শুক্রবার (১২ জুলাই) সন্ধ্যায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার চার সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিকে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি বেড়ে নদী তীরবর্তী চরসহ নিম্নাঞ্চলের অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ।

তিস্তা ব্যারেজের ফ্লাট বাইপাসে ছুঁই ছুঁই পানি

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি দোয়ানি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারেজের ফ্লাট বাইপাস ছুঁই ছুঁই পানি ব্যারেজ রক্ষার্থে যেকোনো মুহূর্তে ফ্লাট বাইপাস কেটে দেয়া হতে পারে। এদিকে পানি ঢুকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা, গড্ডিমারী, বড়খাতা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শনিবার সকালে তিস্তার পানি প্রবাহ দোয়ানি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি ৫৩.১১ সেন্টিমিটার।

ফেনীর ১০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দি হয়ে ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী আগস্ট মাসের শুরুতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ২য় সাময়িক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। গত মঙ্গলবার থেকে লাগাতার বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানির চাপে মূহুরী-কহুয়া নদীর অন্তত ১১ স্থানের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যায়। প্রবলবেগে বন্যার পানি ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। এতে সড়ক, ঘরবাড়ি, মৎস্য খামার, আমনের বীজতলা, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন গ্রামে অবস্থিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফলে বন্ধ রাখা হয়েছে দুই উপজেলার ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম।

পঞ্চগড়ে রাবার ড্যামের ছিদ্র দিয়ে পানি প্রবেশ

টানা ভারি বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পানিতে পঞ্চগড়ের তালমা নদীর রাবার ড্যামের ছিদ্র দিয়ে পানি প্রবেশ করে উজানের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কৃত্রিম বাতাস ছাড়াই পানিতে রাবার ড্যামটি ফুলে নদীর উজানে অবস্থিত চা বাগানসহ ফসলের ক্ষেতে হুহু করে পানি ঢুকছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে উজানের ১০টি গ্রামের দুই সহস্রাধিক মানুষ কৃত্রিম বন্যার শিকার হবে। এতে চা বাগানসহ প্রায় দুইশ একর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাবে।

স্থানীয়রা জানান, শুষ্ক মৌসুমে সেচ সুবিধার জন্য ২০০৬-০৭ অর্থবছরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার তালমা নদীর তালমা এলাকায় প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রাবার ড্যামটি নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর। ২০১৪ সালে ড্যামটিতে ত্রুটি দেখা দেয়। পরে ২০১৮ সালে প্রায় ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ড্যামটি সংস্কার করা হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে বোরো মৌসুমের শুরুতে যখন সেচ কার্যক্রম শুরু হবে, ঠিক সেই মুহূর্তে স্থানীয় কয়েকজন যুবক রাতের আঁধারে ড্যামটির রাবার এক ফুটের মত কেটে দেয়। এ বিষয়ে তালমা রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির নেতারা জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ করেন। পরে রাবারের আরও কয়েক স্থানে ছিদ্র হয়ে যায়। পরবর্তীতে এটি মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এই রাবার ড্যামের রাবার কৃত্রিম বাতাস দিয়ে ফুলিয়ে নদীর উজানে পানি সংরক্ষণ করে শুষ্ক মৌসুমে সেচ কাজে ব্যবহার করা হয়।

Comments

comments

More Stories

১ min read
১ min read
১ min read
error: Content is protected !!