নুসরাত হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে অধ্যক্ষ সিরাজের দায় স্বীকার
১ min readফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে এ মামলার প্রধান আসামি সোনাগাজী সিনিয়র ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা। রবিবার (২৮ এপ্রিল) রাতে ফেনীর জ্যৈষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসেনের আদালতে ১৬৪ ধারায় এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সিরাজ।
জবানবন্দিতে সিরাজ বলে, ‘গত ৪ এপ্রিল নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, জাবেদ হোসেন, হাফেজ আবদুল কাদেরসহ কয়েকজন ফেনী কারাগারে আমার সঙ্গে দেখা করে। এ সময় তারা আমাকে বলে, ওস্তাদ, আলেম সমাজকে হেয় করায় নুসরাতকে একটা কঠিন সাজা দেওয়া দরকার। এ ব্যাপারে তারা আমার হুকুম চায়। আমার অনুগত ছাত্ররা হুকুম চাওয়ায় আমি ভাবাবেগে আবেগিত হয়ে নির্দেশ দিয়েছিলাম, করো। তোমরা কিছু একটা করো।’
জবানবন্দিতে সিরাজ পুড়িয়ে হত্যার নির্দেশ দেওয়া প্রসঙ্গে বলে, ‘আমি তাদেরকে নির্দেশ দিয়ে বলেছিলাম, নুসরাতকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দাও। চাপে কাজ না হলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দিতে নির্দেশ দিই।’
রবিবার বিকাল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আদালতে দায় স্বীকার করে সিরাজ এই জবানবন্দি দেয়।
সিরাজের জবানবন্দি শেষে ফেনীর আদালত চত্বরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল পুলিশ সুপার (এসপি) মো. ইকবাল সাংবাদিকদের এ প্রসঙ্গে ব্রিফিং করেন।
তিনি বলেন, ‘এ মামলায় এজাহারভুক্ত আট আসামিসহ এখন পর্যন্ত ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া পাঁচজন– শাহাদাত হোসেন শামীম, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহমেদ, উম্মে সুলতানা পপি ও কামরুন নাহার মণি রয়েছে। সিরাজসহ এ পর্যন্ত ১০ জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে আদালতে।’
তদন্তকারী সংস্থা পিবিআইয়ের সূত্র জানায়, এই ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কমপক্ষে ২৫ জন জড়িত রয়েছে। এ ঘটনায় নুসরাতের বড়ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে গত ৮ এপ্রিল ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।
১০ এপ্রিল মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়। পিবিআই ২৩ আসামিকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে ১০ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এখনও ৬ জন রিমান্ডে রয়েছে।
গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ন করে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ্দৌলা। রাফির মায়ের করা মামলায় সিরাজকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল রাফি আলিম পরীক্ষায় অংশ নিতে গেলে কৌশলে একটি চারতলা ভবনে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এরপর তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় সিরাজের অনুসারীরা। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাফি।