এপ্রিল ২০, ২০২৪ ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ || ইউএসবাংলানিউজ২৪.কম

পালিত হচ্ছে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দিবস আশুরা

১ min read

আশুরা হলো ইসলামের একটি ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবস। ইসলামিক পঞ্জিকা অনুযায়ী মুহররম এর দশম দিনকে আশুরা বলা হয়। এটি ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। সুন্নি মতানুযায়ী ইহুদীরা মুছা আ. এর বিজয়ের স্মরণে আশুরার সওম পালন করত। তবে শিয়া মত এ ইতিহাসকে প্রত্যাখ্যান করে এবং তারা আশুরাকে কারবালার বিষাদময় ঘটনার স্মরণে পালন করে।

এই দিনটি শিয়া মুসলমানদের দ্বারা বেশ আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হয়ে থাকে। এ উপলক্ষে তারা বিভিন্ন ধরনের মিছিল, মাতম ও শোকানুষ্ঠান আয়োজন করে। তবে একটি ক্ষুদ্র অংশ ততবীর পালন করে থাকে। শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোতে এসব অনুষ্ঠান চোখে পড়ার মত। যেমন- পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক, লেবানন ও বাহরাইন।

তবে আশুরা নিয়ে সুন্নি সমাজে বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে। জনপ্রিয় ধারণায় আশুরা মূলত একটি শোকাবহ দিন কেননা এদিন মুহাম্মদ (সা:)-এর দৌহিত্র হুসাইন ইবনে আলী নির্মমভাবে শহীদ হয়েছিলেন। কিন্তু ইসলামের ইতিহাস অনুসারে এই দিনটি বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ।

এই দিনটি একটি পবিত্র দিন কেননা ১০ মুহররম তারিখে আসমান ও যমিন সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই দিনে পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম (আ:) কে সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই দিনে আল্লাহ নবীদেরকে স্ব স্ব শত্রুর হাত থেকে আশ্রয় প্রদান করেছেন। এই দিন নবী মুসা (আ:)-এর শত্রু ফেরাউনকে নীল নদে ডুবিয়ে দেয়া হয়। নূহ (আ:)-এর কিস্তি ঝড়ের কবল হতে রক্ষা পেয়েছিলো এবং তিনি জুডি পর্বতশৃংগে নোঙ্গর ফেলেছিলেন। এই দিনে দাউদ (আ:)-এর তাওবা কবুল হয়েছিলো, নমরূদের অগ্নিকুণ্ড থেকে ইব্রাহীম (আ:) উদ্ধার পেয়েছিলেন ; আইয়ুব (আ:) দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্ত ও সুস্থতা লাভ করেছিলেন ; এদিনে আল্লাহ তা’আলা ঈসা (আ:)-কে ঊর্ধ্বাকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন। হাসিদে বর্ণিত আছে যে এই তারিখেই কেয়ামত সংঘটিত হবে।

হিজরী ৬০ সনে এজিদ বিন মুয়াবিয়া পিতার মৃত্যুর পর নিজেকে মুসলিম বিশ্বের খলিফা হিসাবে ঘোষণা করে। সে প্রকৃত মুসলমান ছিল না, সে ছিল মোনাফেক। সে এমনই পথভ্রষ্ট ছিল যে সে মদ্যপানকে বৈধ ঘোষণা করেছিল। অধিকন্তু সে একই সঙ্গে দুই সহোদরাকে বিয়ে করাকেও বৈধ ঘোষণা করেছিল। শাসক হিসাবে সে ছিল স্বৈরাচারী ও অত্যাচারী। ইমাম হুসাইন (রা:) এজিদের আনুগত্য করতে অস্বীকৃত হন এবং ইসলামের সংস্কারের লক্ষ্যে মদীনা ছেড়ে মক্কা চলে আসেন। উল্লেখযোগ্য যে, উমাইয়া শাসনামলে ইসলাম পথভ্রষ্ট হয়ে পড়েছিল। মক্কা থেকে তিনি কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি কারবালার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এ সময় উমর ইবনে সাদ আবি ওক্কাসের নেতৃত্বে চার হাজার সৈন্য কারবালায় প্রবেশ করে। কয়েক ঘণ্টা পর শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদির নেতৃত্বে আরো বহু নতুন সৈন্য এসে তার সাথে যোগ দেয়৷ কারবালায় দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। নানা নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এই অসম যুদ্ধে ইমাম হুসাইন (রা:) এবং তাঁর ৭২ জন সঙ্গী শাহাদৎ বরণ করেন। শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদি নিজে কণ্ঠদেশে ছুরি চালিয়ে ইমাম হুসাইন (রা:) হত্যা করে। সেদিন ছিল হিজরী ৬১ সনের ১০ মুহররম।

এপ্রিল ৬৮০ খ্রিস্টাব্দ, মুয়াবিয়া কর্তৃক ইয়াজিদকে খলিফা ঘোষণা করা হয়। ইয়াজিদ মদিনার গর্ভনরকে তাৎক্ষণিকভাবে হুসাইন ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আনুগত্য (বায়াত) আদয়ের জন্য নিদের্শ দেয়।কিন্তু হুসাইন ইবনে আলী তা প্রত্যাখ্যান করে। কারণ, তিনি মনে করতেন যে, ইয়াজিদ ইসলামের মূল শিক্ষা থেকে দূরে সরে গেছে এবং মুহাম্মদের সুন্নাহকে পরিবর্তন করছে। অতঃপর হুসাইন ইবনে আলী তাঁর পরিবারের সদস্য, সন্তান, ভাই এবং হাসানের পুত্রদের নিয়ে মদিনা থেকে মক্কায় চলে যান।

অপরদিকে কুফাবাসী যারা মুয়াবিয়ার মৃত্যু সম্পর্কে অবগত ছিল তারা চিঠির মাধ্যমে তাঁদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য হুসাইনকে অনুরোধ করেন এবং উমাইয়াদের বিপক্ষে তাঁকে সমর্থন প্রদান করে। প্রত্যুত্তরে হুসাইন চিঠির মাধ্যমে জানান যে অবস্থা পর্যবেক্ষনের জন্য তিনি মুসলিম ইবনে আকীল কে পাঠাবেন। যদি তিনি তাদের ঐক্যবদ্ধ দেখতে পান যেভাবে চিঠিতে বর্ণিত হয়েছে সেরুপ তবে খুবই দ্রুতই যোগ দিবেন, কারণ একজন ইমামের দায়িত্ব হচ্ছে কুরআন বর্ণিত অনুসারে কাজের আঞ্জাম দেওয়া, ন্যায়বিচার সমুন্নত করা, সত্য প্রতিষ্ঠিত করা এবং নিজেকে স্রষ্টার নিকট সঁপে দেওয়া। মুসলিম ইবনে আকীলের প্রাথমিক মিশন খুবই সফল ছিল এবং ১৮০০ এর অধিক ব্যক্তি শপথ প্রদান করেছিল। কিন্তু অবস্থা ইতিমধ্যে পরিবর্তন হয়ে যায়। উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ কুফার নতুন গভর্নর হিসেবে যোগ দেন এবং মুসলিম ইবনে আকীলকে হত্যার নির্দেশ জারি করেন। আকীলের মৃত্যু খবর পৌঁছার আগেই হুসাইন ইবনে আলী কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা আরম্ভ করে দেন।

পথিমধ্যে হুসাইন খবর পান যে আকীলকে কুফায় হত্যা করা হয়েছে। তিনি খবরটি তাঁর সমর্থকদের জানালেন এবং তাদের বললেন যে জনগণ তাঁর সাথে প্রতারণা করেছে। তিনি কোন সংশয় ছাড়াই তাঁর সাথীদের তাঁকে ছেড়ে চলে যেতে বললেন। অধিকাংশ সঙ্গী তাঁকে ছেড়ে চলে যায় নিকটাত্মীয়রা ছাড়া। যাই হোক কুফার যাত্রাপথে উবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের সাথে তাঁকে (হুসাইন) মোকাবেলা করতে হয়। কুফাবাসীগণ ইমামবিহীন থাকার কারণে তাঁকে (হুসাইন) আমন্ত্রণ করেছিল সে প্রতিশ্রুতির কথা কুফার সেনাবাহিনীকে স্মরণ করতে বললেন। তিনি বললেন যে, কুফাবাসী সমর্থন করেছিলো বলেই তিনি যাত্রা করেছেন। কিন্তু তারা যদি তাঁর (হুসাইন) আগমনকে অপছন্দ করে তবে তিনি (হুসাইন) যেখান থেকে এসেছেন সেখানে চলে যাবেন। তবে সেনাবাহিনী তাঁকে (হুসাইন) অন্য পথ অবলম্বন করতে বললেন। এতে করে, তিনি (হুসাইন) বাম দিকে যাত্রা করলেন এবং কারবালায় পৌঁছে গেলেন। সেনাবাহিনী তাঁকে (হুসাইন) এমন এক জায়গায় অবস্থান নিতে বাধ্য করল যে জায়গাটি ছিল পানিশূন্য।

সেনাপ্রধান উমার ইবনে সাদ হুসাইনের আগমনের উদ্দেশ্য বুঝার জন্য দূত প্রেরণ করলেন। হুসাইন জানালেন যে তিনি কুফাবাসীর আমন্ত্রণে এসেছেন কিন্তু তারা যদি অপছন্দ করে তবে তিনি ফিরে যেতে প্রস্তুত রয়েছেন। যখন এই প্রতিবেদন ইবনে জিয়াদের কাছে পৌছল তখন তিনি সাদকে হুসাইন ও তাঁর সমর্থকদের ইয়াজিদের প্রতি আনুগত্য আদয়ের নির্দেশ দিলেন। তিনি এও নির্দেশ দিলেন যে, হুসাইন ও তাঁর সঙ্গীরা যাতে কোন পানি না পায়। পরের দিন সকালে উমার বিন সাদ তার সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে বললেন। আল হুর ইবনে ইয়াজিদ আল তামিম সাদের দল ত্যাগ করে হুসাইনের সাথে যোগ দিলেন। তিনি কুফাবাসীদের বুঝাতে ব্যর্থ হয়ে নবীর নাতীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য ভৎসর্ণা করলেন। অতঃপর যুদ্ধে তিনি নিহত হন।

কারবালার যুদ্ধ সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। দিনটি ছিল ১০ ই অক্টোবর ৬৮০ খ্রিস্টাব্দ (মুহাররম ১০, ৬১ হিজরি) এই যুদ্ধে প্রায় ৭২ জন নিহত হন যাদের সকলেই পানি বঞ্চনার শিকার হন। অর্থাৎ সকল পুরুষ সদস্যই নিহত হন কেবলমাত্র রোগা ও দুর্বল জয়নুল আবেদিন ছাড়া।

এটি এক অসম যুদ্ধ ছিল। যেখানে হুসাইন ও তাঁর পরিবার বিশাল এক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীন হন। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আবু রায়হান আল বিন্নী এর মতে, “তাবুগুলোতে আঙুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং মৃতদেহগুলোকে ঘোড়ার খুড় দ্বারা ক্ষতবিক্ষত ও পদদলিত করা হয়; মানব ইতিহাসে কেউ এমন নৃশংসতা দেখেনি। হত্যার আগমুহূর্তে হুসাইন বলেন, “ আমার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যদি মুহাম্মদের দ্বীন জীবন্ত হয়, তবে আমাকে তরবারি দ্বারা টুকরো টুকরো করে ফেল।” 

উমাইয়া সৈন্যরা হুসাইন ও তাঁর পুরুষ সঙ্গীদের হত্যা করার পর সম্পদ লুট করে, মহিলাদে গয়না কেড়ে নেয়। শিমার জয়নাল আবেদীনকে হত্যা করতে চাইলে জয়নাব বিনতে আলী এর প্রচেষ্টায় কমান্ডার উমার ইবনে সাদ তাঁকে জীবিত রাখেন। তাঁকেও (জয়নাল আবেদীন) বন্দী নারীদের সাথে দামেস্কে ইয়াজিদের দরবারে নিয়ে যাওয়া হয়।

ইহুদিরা আশুরা উপলক্ষে মুহররম মাসের ১০ তারিখে রোজা রাখে। শিয়া সম্প্রদায় মর্সিয়া ও মাতমের মাধ্যমে এই দিনটি উদযাপন করে। আশুরা উপলক্ষে ৯ এবং ১০ মুহররম তারিখে অথবা ১০ এবং ১১ রোজা মুহররম তারিখে রাখা মুলমানদের জন্য সুন্নাত। এছাড়া মুসলমানরা এদিন উত্তম আহারের জন্য চেষ্টা করে থাকে।

আশুরা উপল্যক্ষে সুন্নি মুসলিমরা সাধারণত ২-৩ টি নফল রোজা রাখেন।

উইকিমিডিয়া

Comments

comments

More Stories

১ min read
১ min read
১ min read
error: Content is protected !!