প্রবাসী বাংলাদেশীদের মনোজগতে বসন্ত অনুভূতি
১ min read
আটলান্টিক সিটি থেকে সুব্রত চৌধুরি-
‘মধুর বসন্ত এসেছে…’ বাংলার প্রকৃতিতে ফাগুনের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে এসেছে বসন্ত।প্রতিবারের মতোই প্রকৃতিকে রাঙিয়ে দিতে, শূন্য হৃদয় ভরিয়ে দিতে এসেছে ফাগুন । মনের গহীন কোণে অতি সূক্ষ্ম যে পুলক, সে তো কেবল বসন্তই জাগাতে পারে! এই বসন্ত কুসুম কোমল প্রেমের। প্রিয়জনের স্পর্শ নিয়ে বাঁচার সুখ বসন্ত। অনন্তকাল ধরে বাঙালীর মন রাঙিয়ে দিয়ে যাচ্ছে বসন্ত। তাইতো কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উচ্চারিত সত্য- ফুল ফুটুক না ফুটুক/ আজ বসন্ত…। এই বসন্তে ভীষণ আকুলি বিকুলি করে ওঠে মন। বুকে নতুন করে জাগে ভালবাসার বোধ।ভাললাগা ভালবাসার সৌরভ ছড়ানো ছাড়াও মিলনের বার্তা দেয় বসন্ত। এমন লগ্নে প্রিয়জনের কাছে দেহ-মন সঁপে দিতে যেন বাধা নেই কোন।ভীরু প্রাণে কেবলই বাজে- মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে।
সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে প্রকৃতির নিয়মে এখন বসন্ত ঋতু না হলেও প্রবাসী বাংলাদেশীদের মনোজগতে বাংলার ঋতু চক্রের ধারাবাহিকতায় বসন্ত ঠিকই এসে দরজায় কড়া নাড়ে,মিডিয়ার কল্যাণে বসন্ত বরনের লাইভ অনুষ্ঠানে মজে প্রবাসীরা।তারা নিজেকে সাজিয়ে তোলে বসন্ত সাজে,ভালোলাগার রেণু ছড়ায় প্রিয়জনের মাঝে।ভালোবাসার সৌরভ বিলোয় প্রিয়জনদের হৃদয়ে।
প্রবাসীদের কাছে দেশের বসন্ত অনুভূতি সম্পর্কে জানতে মুখোমুখি হয়েছিলাম নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের আটলান্টিক সিটির কয়েকজন বিদগ্ধজনের।তাঁদের একেকজনের অনুভূতি ছিল একেক ধরনের।
নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার নিবেদিতা ভট্টাচার্য তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, মিডিয়ার কল্যাণে এই সুদূর প্রবাসে বসে বসন্ত উৎসবের লাইভ পোগ্রাম দেখতে দেখতে নস্টালজিক হয়ে পড়ি,হৃদয়ে লাগে দোলা।সেই দোলায় দুলতে দুলতে বসন্তের ভালো লাগার রেণু গায়ে মেখে নিজেকে সাজিয়ে তুলি বসন্ত সাজে,আর বসন্তের রং বিলোয় প্রিয়জনের মাঝে।
সংস্কৃতিসেবী রওশনউদদীন এর বসন্ত অনুভূতি একটু ভিন্ন রকম।তিনি বলেন, সুদূর প্রবাসে যদিও দেশের বসন্তের আমেজটা পাই না, তথাপি বসন্ত এলেই মনকে রাঙাতে কবির ভাষায় কবিতার লাইন আওড়াই- ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক,আজ বসন্ত’।
কবি কাজী লিটন তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে কাব্যময়তার আশ্রয় নিয়ে বললেন,যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃতিতে এই সময় বাংলাদেশের বসন্ত ফুল না ফুটলেও বসন্তের ছোঁয়ায় হৃদয় বাগিচায় যে ফুল ফোটে,সেই ফুলটাই আলতো করে পরিয়ে দিই প্রিয়তমার এলোকেশে,তাকেও বসন্ত রংয়ে রাঙাতে ।
নজরুল সংগীত শিল্পী মুনমুন চক্রবর্তী সদ্য এসেছেন দেশ থেকে,তাঁর বসন্ত স্মৃতি এখনো তরতাজা।তিনি তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন এইভাবে,এই দেশের প্রকৃতিতে দেশের বসন্তের ছোঁয়া না মিললেও বসন্ত এলে হৃদয় বাগিচায় ঠিকই বসন্তের ফুল ফোটে,প্রেমের কোকিল কুহু কুহু ডাকে।আর সেই আবেশ ভাগাভাগি করে নিই প্রিয়তমের সাথে।
সংস্কৃতিপ্রেমী লাকী চৌধুরির অনুভূতি একটু ভিন্ন।তিনি বলেন,মননের সংস্কৃতির পরিচর্যাই বসন্তের চেতনা।প্রবাসের ভিন্ন সংস্কৃতিতে দেশের সুস্থ সংস্কৃতির পরিচর্যা করাই হচ্ছে আমার কাছে বসন্তের চেতনা,সেই চেতনা যেন সব প্রবাসী অন্তরে ধারন ও লালন-পালন করে।