বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। ১৯ সেপ্টেম্বর, বুধবার সংসদে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন।
আইনের ৩২ ধারায় অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট প্রয়োগ করে সরকারি কোনো কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক্স মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যকে (‘তথ্য পাচারের’) অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই অপরাধ সংঘটন ও সংঘটনে সহায়তার দায়ে ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকার অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। যদি কেউ একই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার করেন, তাহলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১ কোটি টাকার অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
বিলে সাইবার বা ডিজিটাল অপরাধের লঙ্ঘন জনিত অপরাধের জন্য ধরন বিশেষে ১, ৩, ৫, ৬, ৭, ১৪ বছর ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৩ লাখ, ৫ লাখ ১০ লাখ ২৫ লাখ ১ কোটি, ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ডের বিধান করা হয়েছে। এ ছাড়া বিলের ১৪টি ধারায় অপরাধ অজামিনযোগ্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, বিলটিতে গণমাধ্যম ব্যক্তিদের উদ্বেগ প্রতিফলতি হয়নি এবং তাদের মতামতকে গ্রহণ করা হয়নি। যা তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ঝুঁকির সৃষ্টি করবে।
‘অন্যদিকে, বিলটিতে ব্রিটিশ আমলের অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট অন্তর্ভুক্ত করা দুঃখজনক এবং হতাশাজনক’, বলেন ইমাম।
ফখরুল ইমাম বলেন, ‘এটা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং গবেষণা সীমাবদ্ধ করবে। যখন এই আইন প্রণয়ন হবে তখন এটি সংবিধানের প্রধান মর্ম বিশেষ করে বাক স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা দেশের নাগরিকদের অনিরাপত্তা সৃষ্টি করবে।’
বিরোধী দলের সাংসদ শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল করা হলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনেক জায়গায় ৫৭ ধরার ভীতি আরও বেশিভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনেক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার প্রতিকারে কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।’
এ ছাড়া বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান, মোহাম্মাদ নোমান এবং সেলিম উদ্দীন বিলটির ক্ষেত্রে জনমত নেওয়ার প্রস্তাব করেন, কিন্তু পরে এটি বাতিল করা হয়।
বিলে বিধান করা হয় যে, কোনো ব্যক্তি দেশের বাইরে বিলের বিধানের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করলে তা বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে বলে বিবেচিত হবে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘মন্ত্রণালয় ২০১৫ সাল থেকে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে বিলটি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। কেউ যদি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রতিবেদনটি পড়েন তাহলে তিনি দেখবেন যে সাংবাদিকদের সাথে এবিষয়ে কত আলোচনা করা হয়েছে।’
‘প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা সাংবাদিকদের মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি, তাদের মতামতের ভিত্তিতে আমরা প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনেছি,’ যোগ করেন মোস্তাফা জব্বার।
বিলে অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘এই আইনের অধীনে শাস্তি হওয়ার কোনো নজির নেই। এই আইন সংবাদপত্রকে দমন বা সংবাদপত্র শিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নয়।’
ভবিষ্যতের যুদ্ধ ডিজিটাল যুদ্ধ হবে জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘ওই যুদ্ধে প্রজাতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। আমরা যদি আমাদের দেশকে সুরক্ষিত না রাখি তাহলে আমাদের দায়ী হতে হবে।’
আইনটিকে দেশের জন্য ঐতিহাসিক উল্লেখ করে মোস্তাফা জব্বার আরও বলেন, ‘অনেক উন্নত দেশ নিয়মিতভাবে আইনটির অগ্রগতি নিয়ে জিজ্ঞাসা করেছে। এই আইন বিশ্বের অনেক দেশ অনুসরণ করবে। কারণ ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য বর্তমানে কোনো আইন নেই।’
সিঙ্গাপুরের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সেটার সাথে তুলনা করলে যে কেউ দেখবেন যে আমরা আমাদের আইনটি বানিয়েছি স্বর্গ হিসেবে এবং ওই আইনটিকে (সিঙ্গাপুরের) মনে হবে কারাগার।’
আরো পড়ুন
২০ সেকেন্ডের মধ্যে ১০-১৫ বার কোপানো হয় রুশদিকে
সোনার দাম বেড়ে রেকর্ড, ভরি ৮৪ হাজার ৩৩১ টাকা
অকটেনের দাম বাড়ল লিটারে ৪৬ টাকা, ডিজেল ৩৪ টাকা