এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ২:০০ পূর্বাহ্ণ || ইউএসবাংলানিউজ২৪.কম

আন্দোলনের নামে উচ্ছৃঙ্খলতা শিক্ষার্থী করতে পারে না

১ min read

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্দোলনের নামে উচ্ছৃঙ্খলতা বরদাশত করা যায় না।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনকারীরা যে কী চায়, বারবার জিজ্ঞাসা করা হলেও সঠিকভাবে তারা বলতে পারে না। এ বিষয়ে সরকার থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে দিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাহলে এদের (আন্দোলনকারী) অসুবিধাটা কোথায়, আমার সেটাই প্রশ্ন? আন্দোলনের নামে যারা ভিসির বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে তাদের তো ছাড়া হবে না। তাদের ছাড়া যায় না। আন্দোলনের নামে উচ্ছৃঙ্খলতা তো বরদাশত করা যায় না। যতই আন্দোলন করুক, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। এসব কাজ কোনো শিক্ষার্থী করতে পারে না।

দেশবাসীর সহযোগিতা ও সমর্থন কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসী যদি মনে করেন, তারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে ভুল করেননি, তারা দেশকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করছেন, তাহলে দেশের জনগণ আগামী নির্বাচনেও নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও তাদের সেবার করার সুযোগ দেবেন। আমাদের বিরোধী দল এবং যারা আছে, আমি আশা করি, সকলে নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দেশকে আমরা বিশ্বের দরবারে যে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছি সেটা আমরা ধরে রেখে এগিয়ে যাব। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব।

কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী গতকাল বুধবার বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টের রায় রয়েছে। যেখানে হাইকোর্টের রায় আছে যে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা ওইভাবে সংরক্ষণ থাকবে। আমরা হাইকোর্টের রায় কীভাবে লঙ্ঘন করব? কীভাবে হাইকোর্টের রায় বাদ দেব? সেটা তো আমরা করতে পারছি না। তাহলে তো হাইকোর্টের রায় অবমাননা হবে। তবে কোটা যেটাই থাকুক, কোটা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে যে জায়গায় খালি থাকবে সেখানে মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হবে এবং সেটাই করা হচ্ছে।

কোটা আন্দোলনের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটা নিয়ে আন্দোলন করছে ভালো কথা কিন্তু ভিসির বাড়িতে আক্রমণ করে জ্বালিয়ে দেওয়া, গাড়িতে আগুন দেওয়া, বাড়িতে আগুন দেওয়া, ভাঙচুর এবং লুটপাট করা- এটা কেমন কথা ! এমনকি ভিসির পরিবার আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। এটা কি কোনো শিক্ষার্থীর কাজ? এটা কি কোনো শিক্ষার্থী করতে পারে?

তিনি বলেন, আজকে তারা কথায় কথায় আন্দোলনের নামে ক্লাসে তালা দেয়, ক্লাস করবে না, পরীক্ষা দেবে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কে হবে? সেশনজট আগে অনেক ছিল, অন্তত আমরা ক্ষমতায় আসার পর সেশনজট দূর করেছি। সেশনজট ছিল না। কিন্তু এখন তাদের (আন্দোলনকারী) কারণেই আজকে আবার সেশনজট সৃষ্টি হচ্ছে। কোটা সংস্কার আমরা করব। আমি তো বললাম, সব বাদ দিতে। কিন্তু হাইকোর্টের রায় রয়েছে। হাইকোর্টের রায় আমি অবমাননা করলে তখন তো আমি আদালত অবমাননায় পড়ে যাব। এটা কেউ করতে পারবে না। আমরা মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে দিয়ে একটা কমিটি করে দিয়েছি। তাহলে এদের অসুবিধাটা কোথায়, আমার সেটাই প্রশ্ন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে সংসদ নেতা বলেন, মাত্র ১৫ টাকা হলের সিট ভাড়া, আর ৩০ টাকার খাবার পৃথিবীর কোথায় আছে? আজকে যারা হলে থাকে, তাদের জন্য নতুন নতুন হল বানিয়েছি। ১৫ টাকা সিট ভাড়া দিয়ে আর ৩০ টাকার খাবার খেয়ে যারা লাফালাফি করে, তাহলে সিট ভাড়া আর খাবার যে বাজারদর আছে সেভাবেই দিতে হবে তাদের। সেটা না করে তারা হলের গেট ভেঙে ফেলবে, মধ্যরাতে ছাত্রীরা বের হয়ে যাবে- এটা কি আন্দোলন?

বিরোধী দলের নেতার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতা দখল করে উপকারের বদলে দেশের সর্বনাশ করে গেছে। মতিঝিলে একসময় ঝিল ছিল। আইয়ুব খান তা বন্ধ করে দেয়। সেগুনবাগিচা ও পান্থপথে আগে খাল ছিল। জেনারেল এরশাদ সাহেব এসে সেই খাল বন্ধ করে দিয়ে বক্স কালভার্ট নির্মাণ করেন। এতে করে পানি এখন আর নামতে পারে না। জিয়া এয়ারপোর্ট থেকে দীর্ঘ রাস্তায় দুই ধারে থাকা সকল কৃষ্ণচুড়া গাছ কেটে ফেলেছেন। আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হলে, ক্ষমতায় আসতে পারলে, আমরা সকল বক্স কালভার্ট ভেঙে ফেলে নিচে খাল এবং ওপর দিয়ে এলিভেটেড রাস্তা করে দেব।

সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ আরো ২৫ বছর বৃদ্ধির সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের কারণে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ আরো ২৫ বছর বৃদ্ধি করতে সংসদে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। এতে করে কোনো নারীর সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়ে আসার পথে কোনো বাধা হবে না। কিন্তু এটা নিয়েও নারী আন্দোলনের অনেকে সমালোচনা করেন। তাদের বলব, এত কথা না বলে আগামী নির্বাচনে সরাসরি অংশ নিন, জনগণের কাছে যান, ভোট নিয়ে সংসদে আসুন। কিন্তু ভালো একটা কাজ করার পরও কেন জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন?

২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের কৃষক-শ্রমিক-কামার-কুমার-বেদে-হিজড়া-নৃগোষ্ঠীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ভাগ্যের পরির্তনের কাজ করে যাচ্ছি।

তিঁনি বলেন, আগামীতে দেশের একটি মানুষও দরিদ্র থাকবে না, একটি মানুষও অবহেলিত ও গৃহহারা থাকবে না। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলবই। বাংলাদেশের মানুষকে আর কেউ কোনো দিন দাবিয়ে রাখতে পারবে না।

Comments

comments

More Stories

১ min read
১ min read
১ min read
error: Content is protected !!