মার্চ ২৬, ২০২৩ ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ || ইউএসবাংলানিউজ২৪.কম

ইউএস বাংলানিউজ, নিউইয়র্ক

অগ্রসর পাঠকের বাংলা অনলাইন

‘সেক্টর কমান্ডার থাকলেও একাত্তরে যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলেন না জিয়া’

সেক্টর কমান্ডার থাকলেও একাত্তরের যুদ্ধক্ষেত্রে জিয়াউর রহমান ছিলেন না। তিনি কোনো পাকিস্তানি সৈনিকের ওপর গুলি চালাননি।

রোববার স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।

আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বেচ্ছায় নয় বরং একজন সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে জিয়াউর রহমানকে দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করানো হয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতারাই তাকে দিয়ে এ কাজ করিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ‘২৬ মার্চ দুপুর আড়াইটায় চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক হান্নান প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। পর্যায়ক্রমে ওখানে যারা ছিলেন তারা একে একে পাঠ করেন। জহুর আহমেদ চৌধুরী তখন বলেছিলেন, আর্মির একজনকে নিয়ে আসো, তাহলে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব আসবে। যা মেজর রফিকের বইয়ে উল্লেখ আছে।’

জিয়াউর রহমান সোয়াতের জাহাজ থেকে পাকিস্তানিদের অস্ত্র খালাস করতে গিয়েছিলেন দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২৫ মার্চ থেকে সে তো কোনো বাঙালি সৈনিক বা কাউকে বাঁচাতে চেষ্টা করেনি। যার জন্য সেখানে সবচেয়ে বেশি হতাহত হয়। সেখানে বাকি যে বাঙালি অফিসার ছিলেন, তারা তাদের সৈন্যদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু জিয়া কেন ২৫ মার্চ পর্যন্ত থাকে? চট্টগ্রামে যারা ব্যারিকেড দিয়েছিলেন, উল্টো সে তাদের গুলি করেছে, তাদের মেরেছে।’

তিনি বলেন, ‘সোয়াত জাহাজ থেকে যখন অস্ত্র নামাতে যায়, তখন তাকে ধরা হয়, সবাই আটকায়। তারপর তাকে ধরে নিয়ে আসা হয় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে এবং এটা (স্বাধীনতার ঘোষণা) পাঠ করানো হয়। কেউ এতটুকু করলে আওয়ামী লীগ তা কখনোই অস্বীকার করেনি। যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়েছিল। কিন্তু সেটা রক্ষা করতে পারেনি। কারণ ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে জিয়াউর রহমানের হাত ছিল। মোশতাক-জিয়া একসঙ্গে মিলেই তো এ হত্যাকাণ্ড (৭৫ সালের হত্যাকাণ্ড) চালিয়েছে। যে কারণে খুনিদের দায়মুক্তি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে।’

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তা আসলাম বেগ জিয়াউর রহমানকে প্রশংসামূলক চিঠি দিয়েছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী যখন দেশে গণহত্যা চালিয়েছিল, তখন জিয়াউর রহমানকে এ চিঠি কেন লিখবে? জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডার থাকতে পারে। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে থাকেনি। যেখানে গোলাগুলি হতো, তার থেকে তিন মাইল পেছনে চলে যেতো সে। পাকিস্তানি কোনো সৈনিকের ওপর জিয়া একটা গুলি চালিয়েছে বা পাকিস্তানিদের বিপক্ষে একটি গুলি চালিয়েছে, এটা বিএনপি দেখাতে পারবে না। কিন্তু সে নাকি মুক্তিযোদ্ধা।’

মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপির মিথ্যাচারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিথ্যা কথায় বিএনপি এক্সপার্ট। তাদের সঙ্গে আমরা পারব না। তারা ভাঙা রেকর্ডের মতো বলেই যায়। অবশ্য এখন আর ভাঙা রেকর্ড কেউ চিনবে না। সব তো ডিজিটাল।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিথ্যা বলা বিএনপির ভালো গুণ। ভাঙা সুটকেস ছেঁড়া গেঞ্জি থেকে কোকো লঞ্চ, ১, ২,৩ বের হলো। কত কিছু বের হলো। খালেদা জিয়ার ছেলের পাচার করা কিছু টাকা আমরা ফেরত এনেছি। এরা দুর্নীতি আর ভোটের কথা কীভাবে বলে? উন্নয়ন ওদের চোখে পড়ে না?’

তিনি বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব— এ স্লোগান আওয়ামী লীগের। গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে আওয়ামী লীগ। জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে এনেছি আমরা, যে ক্ষমতা সেনানিবাসে বন্দি ছিল, জিয়া ও এরশাদের পকেটে ছিল বা খালেদা জিয়ার আঁচলে ছিল।’

বিএনপির আমলে প্রতিটি নির্বাচনেই গোলমাল হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার করেছিল। আজকে ভোটের যে উন্নতি সেটা তো আওয়ামী লীগের উদ্যোগে। আমরাই তো ১৪ দল করেছিলাম। এ জোট করে প্রথমে ৩৩ দফা, পরে মহাজোট করে ২৩ দফা দিই। ছবিসহ ভোটার তালিকা আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই হয়েছিল। স্বচ্ছ ব্যালট ব্যবস্থা, সাদাকালো পোস্টার করেছি।’

জনগণ বিএনপিকে ভোট কেন দেবে?— প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওদের নেতা কে? এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী অথবা গ্রেনেড হামলার আসামি, অর্থপাচারকারী ও সাজাপ্রাপ্ত আসামি হচ্ছে তাদের নেতা। সেই দলকে মানুষ কেন ভোট দিতে যাবে? মানুষ তো ভোট দেবে না। মাটি ও মানুষের সংগঠন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। আমরা যে ওয়াদা করেছি সেটা পূরণ করেছি। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। কেউ পেছনে টানতে পারবে না।’

১৯৬২ সালে বঙ্গবন্ধু ছাত্রদের মাধ্যমে নিউক্লিয়াস তৈরি করেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল, সব মহকুমায় এটা তৈরি করেছিলেন যাতে তারা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। এভাবে ধাপে ধাপে তিনি এগিয়েছেন। হঠাৎ করে একদিনে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। কিন্তু প্রতিটি পদক্ষেপ অত্যন্ত সুচারুভাবে নিয়েছিলেন বলেই এবং কখন কী হবে তিনি জানতেন। সেভাবে তিনি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বলেই আমরা এত তাড়াতাড়ি স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম।’

আরও পড়ুন

error: Content is protected !!