মার্চ ১৯, ২০২৪ ৫:৩৩ অপরাহ্ণ || ইউএসবাংলানিউজ২৪.কম

উখিয়ায় হামলায় আরসাকে দায়ী করছে রোহিঙ্গারা

১ min read

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীর ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে একটি মাদ্রাসায় শুক্রবার সকালে হামলায় ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় মিয়ানমারের বিদ্রোহী সংগঠন (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি) আরসাকে দায়ী করছে নিহতের স্বজনেরা। হামলার ঘটনায় প্রথমে সাতজনের মৃত্যুর খবর জানালেও পরে নিহতের সংখ্যা ছয়জন বলে জানায় পুলিশ। তাদের মধ্যে মাদ্রাসাছাত্র নুর কায়সার (১৫) মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানানো হয়।

রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মো. মুহিবউল্লাহ হত্যাকাণ্ডের ২৩ দিনের মাথায় এ ঘটনায় পুরো ক্যাম্পজুড়ে আবারও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মুজিবুর রহমান নামে এক রোহিঙ্গাকে অস্ত্রসহ আটক করেছে।

পুলিশ ও রোহিঙ্গাদের সূত্র জানায়, শুক্রবার ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে বালুখালী ১৮ নম্বর ক্যাম্পের এইচ-৫২ ব্লকের ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ’ মাদ্রাসায় রোহিঙ্গা দুষ্কৃতকারীরা হামলা চালায়। এতে মাদ্রাসায় অবস্থানরত চারজন রোহিঙ্গা ঘটনাস্থলে ও হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও দুজন মারা যান।

নিহতেরা হলেন- ১২ নম্বর ক্যাম্পের জে-৫ ব্লকের মাদ্রাসাশিক্ষক হাফেজ মো. ইদ্রীস (৩২), ৯ নম্বর ক্যাম্পের ২৯ নম্বর ব্লকের মৃত মুফতি হাবিবুল্লাহর ছেলে ইব্রাহীম হোসেন (২৪), ১৮ নম্বর ক্যাম্পের এইচ ৫২ ব্লকের নুরুল ইসলামের ছেলে আজিজুল হক (২২) ও একই ব্লকের আবুল হোসেনের ছেলে মো. আমীন (৩২) এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর ১৮ নম্বর ক্যাম্পের এফ ২২ ব্লকের মো. নবীর ছেলে মাদ্রাসাশিক্ষক নুর আলম ওরফে হালিম (৪৫) ও ২৪ নম্বর ক্যাম্পের রহিমুল্লাহর ছেলে মাদ্রাসাশিক্ষক হামিদুল্লাহ (৫৫) মারা যান।

সদর হাসপাতাল মর্গে দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ’র প্রধান শিক্ষক আবু ছৈয়দ জানান, দীর্ঘদিন ধরে আরসার লোকজন তাদের দলে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে আসছে। এতে তারা সায় না দেওয়ায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে তিনি দাবি করেন। এছাড়া ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করছে অনেক রোহিঙ্গা।

অনেকে পুলিশের সঙ্গে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছে, রাতে পাহারা দিচ্ছে, সন্ত্রাসীদের বিষয়ে তথ্য দিচ্ছে, এসব ঘটনায় আরসা সন্ত্রাসীরা ক্ষুব্ধ হয়। এসবের জের ধরে এ হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছেন এক রোহিঙ্গা নেতা। তার ভাষ্য, আরসার সন্ত্রাসীরাই এ হামলা চালিয়েছে। প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করার কারণে মুহিবউল্লাহকেও তারা হত্যা করেছে। এখন ক্যাম্পে কেউ নিরাপদ নয়।

শুক্রবার বিকেলে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে এ ঘটনায় জড়িতদের শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান। এ সময় তিনি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার লাম্বাশিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে শীর্ষ রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ আততায়ীর গুলিতে খুন হন। তিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে দেশে-বিদেশে সরব ছিলেন। মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান ছিলেন। এ হত্যাকাণ্ডেও আরসাকে দায়ী করে আসছিল মুহিবুল্লাহর পরিবার। এ ঘটনায় পরদিন মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের আসামি করে উখিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ এ ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। পাঁচ রোহিঙ্গাকে দুই দফায় তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তাদের একজন মোহাম্মদ ইলিয়াছ কক্সবাজার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এদিকে মুহিবুল্লাহর পরিবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে তৃতীয় কোনো দেশে যাওয়ার আবেদনের পর তাদের সেখান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।

৮ এপিবিএন’র একজন কর্মকর্তা জানান, মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর ক্যাম্পে সাড়াশি অভিযানে নিহতরা সহায়তা করে আসছিল। গত বুহস্পতিবার রাতেও তারা পুলিশকে সহযোগিতা করে ঘুমিয়ে ছিল। এরপরই এ ঘটনা ঘটে। পুলিশকে সহযোগিতা করায় ক্ষুদ্ধ হয়ে রোহিঙ্গা দুর্বৃত্তরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক ও অধিনায়ক শিহাব কায়সার বলেন, ঘটনার পর থেকে এপিবিএন ও জেলা পুলিশ জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে।

Comments

comments

More Stories

১ min read
১ min read
১ min read

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!