এপ্রিল ২৪, ২০২৪ ১:৪৭ পূর্বাহ্ণ || ইউএসবাংলানিউজ২৪.কম

এরফান সেলিমের ১ বছরের কারাদণ্ড

১ min read

অবৈধ অস্ত্র ও মাদক রাখার দায়ে ঢাকা-৭ আস‌নের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে এরফান সেলিমকে দুই মামলায় ৬ মাস করে ১ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া তার দেহরক্ষী জাহিদকে ৬ মাস করে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ২৬ অক্টোবর, সোমবার র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলমের ভ্রাম্যমাণ আদালত এ কারাদণ্ড দেন।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ সোমবার সন্ধ্যায় এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে হাজী সেলিমের বা‌ড়ি‌তে অভিযান চা‌লি‌য়ে আগ্নেয়াস্ত্র, মদ, বিয়ার ও ওয়া‌কিট‌কিসহ বিপুল প‌রিমাণ নিরাপত্তা সরঞ্জাম উদ্ধার ক‌রেছে র‌্যাব। সোমবার দুপুর ১টা থে‌কে সা‌ড়ে ৩টা পর্যন্ত চকবাজা‌রের ২৬ নম্বর দেবীদাস ঘাট লেনের বা‌ড়ি‌তে অভিযান চা‌লি‌য়ে সাংসদপুত্র মোহাম্মদ এরফান সে‌লিম‌কে আটক করা কা‌লে বা‌ড়ি তল্লা‌শি চা‌লি‌য়ে ওইসব দ্রব্য উদ্ধার করা হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যা‌জি‌স্ট্রেট স‌রোয়ার আলম।

স‌রেজ‌মি‌নে দেখা গে‌ছে, চকবাজা‌রের ২৬ নম্বর দেবীদাস ঘাট লেনের ওই বা‌ড়ির চতুর্থ ও পঞ্চম তলাটি ডু‌প্লেক্স সি‌স্টে‌মে নির্মাণ করা হ‌য়ে‌ছে। ৪র্থ তলার উত্তর কর্ণা‌রের রুম‌টি‌তে বসবাস কর‌তেন এম‌পি পুত্র এরফান সে‌লিম।

তার রু‌মের তোশকের নিচে ম্যাগ‌জিন ভ‌র্তি এক‌টি বি‌দেশী পিস্তল পাওয়া গে‌ছে। এছাড়া ৫ম তলায় পূর্ব পা‌শের কর্ন‌ারে ৫‌টি ওয়ারল্যাস এ‌বিএস সি‌স্টেম ও ৪০টি ওয়াকিট‌কি ‌সেট, এক‌টি হ্যান্ডকাপ, এক‌টি বন্দুক, বি‌দেশী ম‌দের বোতল ও বিয়ার মদ পাওয়া গে‌ছে।

এসব সরঞ্জাম ও আগ্নেয়াস্ত্র ফ‌রেন‌সিক রি‌পো‌র্টের জন্য এখ‌নো যে অবস্থায় ছিল, তেমন‌টি রে‌খে দেয়া হয়‌নি ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যা‌জি‌স্ট্রেট স‌রোয়ার আলম।

র‌্যাব জানায়, আটক এরফান মোহাম্মদ সে‌লিম ঢাকা দ‌ক্ষিণ সি‌টি কর‌পো‌রেশন (ডিএস‌সি‌সি) ৩০ নম্বর ওয়া‌র্ডের কাউ‌ন্সিলর ও নোয়‌াখালী -৪ আস‌নের সংসদ সদস্য একরামুল করীম চৌধুরীরর মে‌য়ের জামাতা। এ রি‌পোর্ট লেখা পর্যন্ত ( সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত) অভিযান শেষ হ‌য়ে সংবাদ স‌ম্মেল‌নের প্রস্তু‌তি নেয়া হ‌চ্ছে ব‌লে জানা গে‌ছে।

প্রসঙ্গত, রোববার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে ধানমণ্ডিতে কলাবাগান ক্রসিংয়ের কাছে ঢাকা -৭ আস‌নের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সে‌লি‌মের গাড়ির স‌ঙ্গে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ল্যফটেন্যান্ট ওয়া‌সিফ আহ‌মেদ খানের মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লেগেছিল। এরপরই গাড়ি থেকে এরফান সে‌লিমসহ তার লোকজন নেমে লেফটেন্যান্ট ওয়াসিম নামের ওই কর্মকর্তাকে বেদম পিটিয়েছেন।

রাত সোয়া ১০ টার দিকে সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগানো গাড়ি ও নৌবাহিনীর কর্মকর্তার মোটরসাইকেল দুই-ই ধানমণ্ডি থানায় জব্দ করা হয়। সোমবার সকাল ৮টায় হত্যা‌চেষ্টার অভি‌যো‌গে ধানম‌ণ্ডি থানায় মামলা দা‌য়ের করা হয়।

যা ঘটেছিল:

মামলার এজাহারে বেআইনিভাবে পথরোধ, সরকারী কর্মকর্তাকে মারধর, জখম ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগের কথা বলা হলেও স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, রাস্তায় গাড়ি থেকে নেমে মোটরসাইকেল আরোহী ওই নৌবাহিনী কর্মকর্তাকে মারধর করা হয় রবিবার রাতে।

খবরে বলা হচ্ছে, তিনি সস্ত্রীক মোটরসাইকেলযোগে ফিরছিলেন। এসময় একটি গাড়ির সঙ্গে মোটরসাইকেলটির ধাক্কা লাগার পর গাড়িটি থেকে অভিযুক্তরা নেমে এসে ওই কর্মকর্তাকে মারধর করেন।

এমনকি তিনি নিজের পরিচয় দেয়ার পরও অভিযুক্তরা মারধর অব্যহত রেখেছে বলে খবরে উল্লেখ করা হয়।

গাড়িটিতে সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগানো ছিল বলে খবরে বলা হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে এরইমধ্যে একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, এক ব্যক্তি তার উপর হওয়া হামলার বর্ণনা দিচ্ছেন।

তিনি বলছেন, তাকে বিনা কারণে একতরফাভাবে আঘাতের পর আঘাত করা হয়। এতে তার একটি দাঁতও ভেঙ্গে যায়। তার স্ত্রীর গায়েও হাত তোলা হয়েছে বলে ভিডিওতে তিনি দাবি করেন। তবে, এই ভিডিওটি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশের স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে ভিডিওর এই ব্যক্তিকে লেফটেন্যান্ট ওয়াসিম আহমদ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে এরফান সেলিমের কোন বক্তব্য গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।

মামলার এজাহারে যা আছে:

মামলার এজাহারে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা বলেন, আমি ওয়াসিফ আহমদ খান (২৬), পিতা-ওয়ালিদ খান ইউসুফজাই, সাং-স্থায়ী ঠিকানা-১৩/২২, ব্লক-বি, বাবর রোড, থানা-মোহাম্মদপুর, ঢাকা। বর্তমানে লেফটেন্যান্ট পদে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ঘাঁটি হাজী মহসীন, ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা-১২০৬ এ কর্মরত আছি। থানায় হাজির হয়ে বিবাদী ১. এরফান সেলিম (৩৭), পিতা-হাজি মো. সেলিম, সাং-বড় কাটারা দেবীদাস ঘাট, থানা চকবাজার, ঢাকা; ২. এবি সিদ্দিক দিপু (৪৫), পিতা+ঠিকানা-অজ্ঞাত, ৩. মো. জাহিদ (৩৫), পিতা+ঠিকানা-অজ্ঞাত, ৪. মো. মিজানুর রহমান (৩০), পিতা-মনিরুজ্জামান, সাং-আদর্শপাড়া, থানা ও জেলা-পিরোজপুর, বর্তমানে হোসেনী দালান, থানা-চকবাজার, ঢাকাসহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনের বিরুদ্ধে এই মর্মে এজাহার দায়ের করিতেছি যে, গত ২৫/১০/২০২০ তারিখে আমি এবং আমার স্ত্রী আনান আদ্রিতা নীলক্ষেত থেকে পাঠ্যবই ক্রয় সমাপনান্তে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলযোগে কর্মস্থল বাংলাদেশ নৌবাহিনী ঘাঁটি হাজী মহসিন, ঢাকা সেনানিবাস ফেরার পথে ধানমণ্ডি ল্যাবএইড হাসপাতালসংলগ্ন এলাকায় প্রধান সড়কের ওপরে ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৫৭৩৬ গাড়িটি আমার ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। অতঃপর বর্ণিত ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৫৭৩৬ গাড়িটি থেকে একজন ব্যক্তি নেমে আসলে আমি উক্ত ব্যক্তিকে আমার পরিচয় প্রদান করা সত্ত্বেও আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে অশ্লীল এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজসহ হত্যার হুমকি প্রদান করত দ্রুতগাড়িতে আরোহন করে স্থান ত্যাগ করেন।

পরবর্তীতে ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ গজ দূরে আনুমানিক ১৯.৪৫ ঘটিকায় ল্যাবএইড হাসপাতালের বিপরীত পাশে কলাবাগান বাসস্ট্যান্ড সিগন্যালে বর্ণিত গাড়িটি দাঁড়ালে, আমি উক্ত গাড়ির বাম পাশে গিয়ে মোটরসাইকেলটি থামাই এবং জানালায় নক করি। অতঃপর উক্ত গাড়ির সব আরোহী গাড়ি থেকে নেমে আসলে পুনরায় আমার পরিচয় প্রদান করি। এতদ্বসত্ত্বেও বর্ণিত গাড়ির সব আরোহী আমার উদ্দেশে বলেন যে, ‘তোর নৌবাহিনী সেনাবাহিনী বাইর করতেছি, তোর লেফটেন্যান্ট/ক্যাপ্টেন বাইর করতেছি, তোকে এখনই মেরে ফেলব।’ এরপর বর্ণিত গাড়ির সব আরোহী পথরোধ করে আমার ওপর অতর্কিতে হামলা করে শরীরের বিভিন্ন অংশে কিল-ঘুষি এবং লাথি মেরে রাস্তায় ফেলে দিয়ে অনবরত আঘাত করে আমাকে রক্তাক্ত করেন। একই সময় আমার স্ত্রী আমাকে রক্ষা করতে গেলে তাঁকেও ধাক্কা দেয় এবং এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে দ্রুত উক্ত স্থান ত্যাগ করে। আমি মাটিতে রক্তাক্ত ও আহত হয়ে পড়ে থাকা অবস্থায় সাধারণ জনগণ ও পাশের সিগন্যালে ডিউটিরত পুলিশ আমাকে উদ্ধার করেন এবং ড্রাইভারসহ গাড়িটি আটক করেন।

এ সময় সাধারণ জনগণ মোবাইলে ভিডিও ধারণ করতে থাকেন। উক্ত সময়ে বর্ণিত গাড়ির একজন আরোহীর ব্যক্তিগত আইডি কার্ডসহ অন্যান্য আক্রমণকারীদের ছবি তুলতে সক্ষম হই। উক্ত ব্যক্তিগত আইডি কার্ডের মাধ্যমে জানতে পারি জনৈক ব্যক্তি ২ নম্বর বিবাদী এবি সিদ্দিক দিপু, প্রটোকল অফিসার হিসেবে মদিনা গ্রুপে কর্মরত। তা ছাড়া আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে আক্রমণকারী সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হই, যিনি ঢাকা-৭ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিমের পুত্র ১ নম্বর বিবাদী এরফান সেলিম (কাউন্সিলর ৩০ নম্বর ওয়ার্ড, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ঢাকা)। পরবর্তীতে বর্ণিত গাড়িতে থাকা ড্রাইভার ব্যতীত সবাই পালিয়ে যায় এবং ওই সিগন্যালে ডিউটিরত পুলিশ ধানমণ্ডি মডেল থানার অফিসার ফোর্স আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নিয়ে যান।

আমার ইউনিট কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে সংবাদ পেয়ে আমাকে চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। একই সঙ্গে টহলরত পুলিশ বর্ণিত গাড়ি ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৫৭৩৬ এর চালককে হেফাজতে নেন। উক্ত ড্রাইভারকে তার নাম জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি নিজের ও বিবাদীদের উপরোল্লিখিত নাম-ঠিকানা প্রকাশ করেন। অপর একজন আক্রমণকারী ৩ নম্বর বিবাদী ১ নম্বর বিবাদীর ব্যক্তিগত দেহরক্ষী মো. জাহিদের নামও উক্ত ঘটনার সময় উপস্থিত আক্রমণকারী হিসেবে উল্লেখ করেন। বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহিত আলোচনা করে এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হলো।

Comments

comments

More Stories

১ min read
১ min read
১ min read

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!