মার্চ ২৮, ২০২৪ ৯:১৬ অপরাহ্ণ || ইউএসবাংলানিউজ২৪.কম

লন্ডনে কবিকণ্ঠের আবৃত্তি অনুষ্ঠান

১ min read

পূর্ব লন্ডনের শাহ কমিউনিটি সেন্টারে সম্প্রতি ‘কবিকণ্ঠ’ আয়োজন করে কবি মুজিব ইরমের কবিতা নিয়ে আলোচনা, পাঠ ও আবৃত্তির একটি বিশেষ অনুষ্ঠান। কবি হামিদ মোহাম্মদের উপস্থাপনায় আলোচনায় অংশ নেন কবি মাশুক ইবনে আনিস, কবি ফারুক আহমেদ রনি, কবি জফির সেতু, কবি টি এম আহমেদ কায়সার, কবি মিল্টন রহমান, লেখক সারওয়ার ই আলম প্রমুখ। কবিতা পাঠে অংশ নেন আবৃত্তিশিল্পী পপি শাহনাজ, অজন্তা দেব রায়, মোস্তাফা জামান নিপুন। মুজিব ইরম রচিত পুঁথি পাঠে অংশ নেন কবি মুজিবুল হক মনি। এছাড়া সপাঠ ও কথনে অংশ নেন কবি মুজিব ইরম।

অতিথি আলোচক সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কবি জফির সেতু বলেন, মধ্যযুগে কবি আলাওল আরাকান রাজ্যে বাংলা সাহিত্যের চর্চা করে যে বাংলা সাহিত্যের বিকাশ সাধন করেছিলেন, এখন বিলেতে বসে কবি মুজিব ইরম একইভাবে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে যাচ্ছেন। তাঁর ভিন্নমাত্রার এ কাজ অবশ্যই ইতিহাসে অন্তর্ভুক্ত।

কবি মিল্টন রহমান বলেন, মুজিব ইরম আত্ম-অনুসন্ধানের যে নতুন অন্তর্জাগতিকতা নির্মাণ করেছেন তা দেশকাল পেরিয়ে আর্ন্তজাতিক দ্যোতনা সৃষ্টি করেছে। তার কবিতায় ‘হোমসিকনেস’ স্বদেশপ্রেমকে উসকে দিতে পেরেছে। উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, মুজিব ইরম শত বছর পরেও মানবিক এ বেদনাকে ধারণ করেছেন, তবে ভিন্ন আঙ্গিকে, ভিন্ন মেজাজে। এ জন্য তিনি বিশিষ্ট।

কবি টি এম আহমেদ কায়সার আলোচনায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, প্রথা ভাঙার যে তর্কবিতর্ক নব্বইয়ের লিটল ম্যাগ আন্দোলনে আমরা করেছি, সেই বাকবদলের সফল কবি মুজিব ইরম। কবিতার শরীর নির্মাণ কৌশল বদলে দেয়া, অন্তর জাগতিক কাব্যস্পর্শকে পাঠকের মনে স্পন্দিত করা, নতুনভাবে বলা- সবই মুজিব ইরমকে সার্থক জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে তার কবিতা। যাকে ‘বিদ্রোহ’ বা চ্যালেঞ্জ বলতে হবে।

কবি মাশুক ইবনে আনিসের বক্তব্যে উঠে আসে সাহিত্য জগতের চলমান ঈর্ষা পরায়ণতার কথা। তিনি বলেন, সমসমায়িক বা বন্ধু কবিদের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম প্রতিযোগিতা থাকে, সেটা ভালো। কিন্তু যতটুকু জানি, বেশিরভাগ ঈর্ষাই থাকে এ প্রতিযোগিতার অন্তরালে। কবি মুজিব ইরমের কাব্যকর্ম নিয়ে হামিদ মোহাম্মদ যে ঐতিহাসিক আয়োজন করলেন, এটা বিস্ময়কর, অভিবাদনযোগ্য।

কবি ফারুক আহমেদ রনি বলেন, কোনো প্রকৃত কবিকে নিয়ে বা মুজিব ইরমকে নিয়ে এ ধরনের একক আয়োজন বিলেতে এই প্রথম। কবিকণ্ঠ ইতিহাস সৃষ্টি করলো।

অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রাণ ছিল মুজিব ইরমের কবিতা থেকে পাঠ। পপি শাহনাজের হৃদয়গ্রাহী পাঠ ছিল মুগ্ধ করার মতো। হাসিনা আখতার, অজন্তা দেব রায়ের কবিতা পাঠ উপস্থিত দর্শকদের মনোযোগ কাড়ে। অনুষ্ঠানে আকর্ষণীয় পর্ব ছিল মুজিব ইরমের কবিতা থেকে কবি মুজিবুল হক মনির পুঁথিপাঠ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কবিকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। ফুল দেওয়ার মুহূর্তটি বর্ণিল ও আবেগঘন হয়ে ওঠে উপস্থিত শ্রোতা দর্শকদের যোগদানে। কবি বরণের পর পাঠ করা হয় কবি বৃত্তান্ত। এতে কবির জীবন ও সাহিত্যকর্মের বিবরণ পাঠ করেন কবি ইকবাল হোসেন বুলবুল।

সব শেষে কবি মুজিব ইরম সপাঠে সকথনে অংশ নেন। তিনি তার প্রিয় স্মৃতিজাগানিয়া একটি কবিতা পড়ে শোনান। সকথনে বলেন, আমি অভিভূত কবিকণ্ঠ’র হামিদ মোহাম্মদ ভাইয়ের আয়োজনে। আর আপনারা যারা এতে উপস্থিত হয়ে আমার কবিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন, পাঠ করেছেন এবং আমাকে ভালোবেসে ধৈর্য ধরে কবিতা ও আলোচনা শুনেছেন, সবাইকে আমার বিনীত ধন্যবাদ। আপনারা আমার বংশের লোক, কবিবংশের লোক; আপনাদের জয় হোক, কবিবংশের জয় হোক।

কবি মুজিব ইরম ২০১৭ সালে বাংলা একাডেমি সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া তিনি মুজিব ইরম ভনে শোনে কাব্যবান কাব্যগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমি তরুণ লেখক প্রকল্প পুরস্কার ১৯৯৬। বাংলা কবিতায় সার্বিক অবদানের জন্য পেয়েছেন সংহতি সাহিত্য পদক ২০০৯, কবি দিলওয়ার সাহিত্য পুরস্কার ২০১৪। কবিবংশ কাব্যগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার ২০১৪। শ্রীহট্টকীর্তন কাব্যগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন সিটি-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

Comments

comments

More Stories

১ min read
১ min read
১ min read
error: Content is protected !!