মার্চ ২৯, ২০২৪ ৬:১২ পূর্বাহ্ণ || ইউএসবাংলানিউজ২৪.কম

ধনীর দুলাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট

১ min read

ধনীর দুলাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট- এমন একটি শিরোনাম তার জীবনের সঙ্গে চমৎকার মানিয়ে যায়। কেননা ইতিমধ্যে বিশ্ববাসী জেনে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হচ্ছেন ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারে তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রকে তার হারানো গৌরব ও শ্রেষ্ঠত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করবেন। জনগণ তার সেই ডাকে সাড়া দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল সামরিক বাহিনী, কয়েক হাজার পারমাণবিক বোমা ও বাণিজ্যের শক্তিশালী ঘাঁটির সর্বাধিনায়ক এখন তিনি। বিশ্বের শীর্ষ ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের অধিপতি হিসেবে এশিয়ার চীন ও ভারতকে মোকাবিলা করাই হবে ট্রাম্পের প্রধান চ্যালেঞ্জ।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের জীবনের গল্প বেশ রঙিন। ধনীর দুলাল হিসেবে বেড়ে ওঠা ট্রাম্প বাবার ব্যবসার উত্তরাধিকার হন। তার বর্ণিল জীবনে রাজনীতির কোনো ছিটেফোঁটা ছিল না। নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা ট্রাম্পের সঙ্গে এক সময় ক্লিনটন পরিবারের ভালো সম্পর্ক ছিল। বিল ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তাদের ভোজঘরে দেখা যেত ট্রাম্পকে।

ট্রাম্প যে প্রেসিডেন্ট হবেন, তা অনেকের ভাবনাতে ছিল না। বছর দুয়েক আগেও তিনি ছিলেন রাজনীতির বাইরের মানুষ। কোনো রাজনৈতিক পদেও তিনি ছিলেন না। উপরন্তু রিপাবলিকান পার্টির চেয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে একসময় তার বেশি সখ্য ছিল। সেই ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন।

ডেমোক্রেটিক পার্টির হেভিওয়েট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের জনপ্রিয়তার ধারে কাছেও আসতে পারেননি ট্রাম্প। কিন্তু নির্বাচনের ঠিক দুই সপ্তাহ আগে তার দুর্বার উত্থান ঘটে। ঘুরে দাঁড়ান ট্রাম্প। জনপ্রিয়তায় হিলারিকে ছুঁয়ে ফেলেন। শেষ পর্যন্ত তিনিই বাজিমাত করলেন। তাকে আটকাতে পারলেন না হিলারি।

ট্রাম্প শুধু হিলারিকে হারিয়েছেন- এমন বলা ঠিক হবে না। তার চেয়েও বড় মঞ্চে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছে তাকে। তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন নিজ দলের শীর্ষ নেতারা। কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ও রিপাবলিকান শীর্ষ নেতা পল রায়ান তার নির্বাচনী প্রচারে আসেননি। বরং বারবার তাকে ভর্ৎসনা করেছেন। যদিও ভর্ৎসনা করার মতো কথা বলতে দ্বিধা করেননি ট্রাম্প। তারপরও জনগণ তাকে বেছে নিয়েছে প্রেসিডেন্ট হিসেবে।  ৭০ বছর বয়সি ট্রাম্প হেসেছেন বিজয়ের হাসি।

ট্রাম্প কাহিনি : ট্রাম্পের জন্ম১৯৪৬ সালের ১৪ জুন; যুক্তরাষ্ট্রের জাঁকজমকপূর্ণ শহর নিউ ইয়র্কের কুইন্সে। বাবা ফ্রেডরিক ট্রাম্প। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে ট্রাম্প চতুর্থ। বাবা তার নাম রাখেন ডোনাল্ড। সঙ্গে বাবার নাম গ্রহণ করে তার নাম হয় ডোনাল্ড জুনিয়র ট্রাম্প।

ট্রাম্পের বাবা ফ্রেডরিক ট্রাম্প ছিলেন রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী। নিউ ইয়র্কের স্ট্যাটান আইল্যান্ড ও ব্রুকলিনে মধ্যবিত্তদের জন্য বাড়ি তৈরি করতেন। সেই থেকে তাদের পারিবারিক ব্যবসার শুরু। পৈত্রিক এই ব্যবসা ট্রাম্পের হাতে পূর্ণতা পায়।

নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প যে অভিবাসনবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেন, তা তার একদিনের তৈরি কিছু নয়। এর গোড়ায় ছিলেন তার মা। তার মা কট্টর অভিবাসনবিরোধী ছিলেন। তিনি স্কটিশ বংশোদ্ভূত। নিউ ইয়র্কে ঘুরতে এসে তার বাবার সঙ্গে পরিচয় হয়, পরে বিয়ে হয়।

ট্রাম্প শৈববে ছিলেন দুরন্ত। স্কুলে তার খামখেয়ালিপনায় অতিষ্ঠ ছিল শিক্ষকরা। পরে তার বয়স যখন ১৩ বছর, তখন তাকে পাঠানো হয় সামরিক একাডেমিতে। তবে যে বিষয় বলতে হয়, অঢেল সম্পদ থাকলেও তার বাবা তাকে সাধারণ কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কারখানায় পাঠান। ১৯৬৪ সালে স্নাতক শেষ করে ফোর্ডহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ট্রাম্প। দুই বছর পর ট্রান্সফার হন পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির হোয়ারটন স্কুল অব ফাইন্যান্সে। ১৯৬৮ সালে সেখান থেকেই অর্থনীতিতে ডিগ্রি নেন। তার উচ্চতর পড়াশোনা এখানেই শেষ হয়। ভিয়েতনাম যুদ্ধে যোগদানের জন্য তাকে মনোনীত করা হলেও তিনি অসুস্থতাজনিত ছুটি নিয়ে যাননি।

ট্রাম্প ব্যবসা শুরু করেন তার বাবার কাছ থেকে ১০ লাখ ডলার ধার করে। বাবার মতো তিনিও রিয়েল স্টেট ব্যবসা শুরু করেন। এক সময় বাবার ব্যবসার পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে আসে ট্রাম্পের হাতে। পরে বাবার সঙ্গে ব্যবসা করতে গিয়ে নিজের ব্যবসার বিস্তৃতিও বাড়িয়ে তোলেন ট্রাম্প। ১৯৭১ সালে ট্রাম্প কোম্পানির নাম বদলে হয় ‘ট্রাম্প অর্গানাইজেশন’। ১৯৯৯ সালে ট্রাম্পের বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর ট্রাম্প বলেন, বাবাই ছিলেন তার অনুপ্রেরণা। পারিবারিক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ বুঝে নেওয়ার পর ব্রুকলিন ও কুইন্স থেকে প্রকল্প সরিয়ে ম্যানহাটানে বড় বড় ভবন নির্মাণে নজর দেন ট্রাম্প।

ম্যানহাটানের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা আঁচ করতে পেরে সেখানে বিনিয়োগ বাড়াতে থাকেন ট্রাম্প। চমৎকার নির্মাণশৈলী ও জনগণের আস্থার কারণে সেই কাজগুলোই পরে তাকে বিপুল মুনাফা এনে দেয়। ফোর্বসের তথ্যানুযায়ী, ট্রাম্পের মোট সম্পদ এখন ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তবে ট্রাম্পের সম্পদ নিয়ে বিতর্ক আছে। এই বিতর্কের জন্য তিনিই দায়ী। কারণ, তার দাবি তার সম্পত্তির পরিমাণ আরো অনেক বেশি।

যার নেশা ছিল ব্যবসা, যার পরিচয় ছিল ব্যবসায়ী এখন সেই মানুষটি দুনিয়ার সবচেয়ে বড় নেতা। শক্তিধর ব্যক্তি হিসেবে অসীম ক্ষমতার চর্চা করার সুযোগ রয়েছে তার। ব্যবসা থেকে রাজনীতি- ট্রাম্প প্রমাণ করলেন তিনি সর্বত্রই সফল ও নায়ক।

Comments

comments

More Stories

১ min read
১ min read

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!